বগুড়ার শেরপুরে সবুজে ঘেরা ধানখেতগুলো এখন সোনালি রঙে রাঙিয়ে উঠছে। কৃষকেরা নতুন ধান কাটার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির সামনে এই ধান সেদ্ধ করা ও শুকানোর জন্য জায়গা তৈরি করতে শুরু করেছেন নারীরা। নতুন ধানে কয়েক দিন পরেই এসব গ্রাম মেতে উঠবে ‘নবান্ন’ উৎসবে।
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর উপজেলায় ২২ হাজার ৪০০ হেক্টরে আমন ধানের চাষ হয়েছে। গত বছর এই ধানের চাষ হয় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে। একই দপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জি এম মাসুদ বলেন, গত বছরে এই মৌসুমে বিঘাপ্রতি শুকনো ধান হয়েছে ১৭ মণ। এ বছর তা বেড়ে ১৮-১৯ মণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার উপজেলার কুসুম্বী, বিশালপুর, ভবানীপুর, মির্জাপুর, সুঘাট ও শাহবন্দেগী ইউনিয়ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের ধানখেতগুলো সোনালি রং ধারণ করেছে। সড়কের পাশের ধানখেতগুলোর এমন রূপে মুগ্ধ পথচারীরা।
কৃষকেরা বলেন, গ্রামে যেসব জমিতে আগাম এই ধান চাষ হয়েছে, শুধু সেসব জমিতে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়ে যাবে। এ বছর উপজেলায় উচ্চফলনশীল জাতের মধ্যে ব্রি ধান–৪৯ সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে। এ ছাড়া ব্রি ধান–৫১ ও ব্রি ধান–৭১, রণজিৎ, স্বর্ণা-৫ জাতের ধান চাষও করেছেন কৃষকেরা। কৃষকদের মতে, কিছুদিন টানা বৃষ্টি না হলে বিঘাপ্রতি গড়ে ২০ থেকে ২২ মণ ধান উৎপাদিত হতো।
কুসুম্বী ইউনিয়নের মালিহাটা গ্রামে বাড়ির আঙিনার সামনে এক নারী চুলা খুঁড়ছিলেন। তিনি বলেন, আর এক সপ্তাহ পর ধান কাটা শুরু হবে। কাটা ধান মাড়াই করার পর চাল করার জন্য সেদ্ধ করতে হবে। এ জন্য তিনি চুলা তৈরি করে রাখছেন। একই গ্রামের কৃষক আবু বক্কর বলেন, জমিতে ধান কাটার পর মাড়াই করার জন্য কৃষকের বাড়ির আঙিনাও তৈরি করে রাখার কাজ চলছে।
গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়ার উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এ বছর সরকারি গুদামে আমন মৌসুমের উৎপাদিত ধান কৃষকেরা বিক্রি করতে পারবেন। যে কৃষকেরা এই ধান চাষ করেছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করে অনলাইনে আপলোড করার কাজ চলছে। ১০ নভেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। যাঁদের নাম লটারিতে উঠবে, তাঁরা সরকারি খাদ্যগুদামে এই ধান বিক্রি করতে পারবেন।