সচ্ছলদের খাসজমি দেওয়া কাউখালীর সেই ভূমি কর্মকর্তার পুরস্কার স্থগিত

নজরুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় সচ্ছলদের নামে খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জেলার ‘শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা’ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আজ রোববার বিকেলে ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁকে পুরস্কার দেওয়ার কথা ছিল। তবে নজরুল ইসলামকে নিয়ে বিতর্ক ওঠায় তাঁর পুরস্কার স্থগিত করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে উপজেলা পর্যায়ে ভূমি কার্যালয়ে কর্মরত সহকারী কমিশনার (ভূমি), কানুনগো, সার্ভেয়ার, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে একজন করে জেলায় শ্রেষ্ঠ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। কাউখালী উপজেলার সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এ বছর জেলার শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নির্বাচিত হন। আজ বিকেলে ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ভূমি কর্মকর্তাদের মধ্যে এ পুরস্কার তুলে দেন। তবে নজরুল ইসলামকে পুরস্কার দেওয়া হয়নি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, নজরুল ইসলাম জেলার শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছিলেন। পাঁচটি বিভাগে পাঁচজনকে এ পুরস্কার দেওয়ার কথা ছিল। তবে নজরুল ইসলামকে নিয়ে বিতর্ক ওঠায় তাঁর পুরস্কার স্থগিত করা হয়েছে। বাকি চারজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

হুমায়ুন কবির আরও বলেন, কাউখালী উপজেলায় খাসজমি সচ্ছলদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ায় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম আলোর প্রতিবেদনে প্রকাশিত উপজেলার গন্ধর্ব গ্রামের ভূমিহীন পুষ্প ব্যাপারীর জন্য পাকা ঘর বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে দুই শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়া হয়েছে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় ‘পিরোজপুরের কাউখালী, সচ্ছলেরা পেলেন খাসজমি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ওই দিন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. হুমায়ুন কবিরকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাউখালী উপজেলায় ১৩৭ জনকে খাসজমি বন্দোবস্তের অনুমোদন দেন। বিষয়টি সম্প্রতি জানাজানি হয়। খাসজমি বন্দোবস্ত পাওয়া ১৩৭ জনের নামের তালিকা ঘেঁটে ২০ জন ব্যবসায়ী, ২৫ জন সচ্ছল ব্যক্তি, ৩ জন প্রবাসী, ৫ জন চাকরিজীবীসহ মোট ৫৩ জনের সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা ভূমিহীন নন। বরং তাঁদের মধ্যে অনেকেই এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমি ও সম্পদের মালিক।

কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা না মেনে এসব ব্যক্তি ভূমি কার্যালয়ের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে খাসজমি বন্দোবস্ত পেয়েছেন। ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের স্ত্রী সামসুন্নাহার উজিয়ালখান গ্রামে ৫০ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত পান।