সচ্ছলতা ফেরাতে সৌদিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল রাকিবুলের

রাকিবুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

দেশে থাকতে বিয়ে করেন রাকিবুল ইসলাম (২২)। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় রাকিবুলের ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক ছেলেসন্তান। সেই ছেলে ও পরিবারের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য ১৪ দিন আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু স্থানীয় সময় গতকাল রোববার বেলা দেড়টার দিকে সড়ক পরিচ্ছন্নতার কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান রাকিবুল। তাঁর মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন স্বজনেরা।

রাকিবুল ইসলাম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের গাঙিনা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. চান মিয়ার ছেলে।

এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চান মিয়া স্থানীয় সিডস্টোর বাজারে একটি চায়ের দোকান চালান। ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠাতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে তিন লাখ টাকা ধারদেনা করতে হয়েছে তাঁর। আশা ছিল ছেলের আয়ের টাকা দিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরার পাশাপাশি সব ধারদেনা পরিশোধ করে দেবেন। কিন্তু তাঁর সেই আশা ভেস্তে গেছে। উপরন্তু কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে এবং দেনার কথা ভেবে চান মিয়া এখন পাগলপ্রায়।

চান মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘১ জুন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবের রিয়াদে পৌঁছায় রাকিবুল। সেখান থেকে তাকে তায়েফ নগরীতে পাঠানো হয়। তায়েফে পৌঁছানোর পর সে ফোন করে কাজে যোগদানের কথা জানায়। গত শনিবার বিকেলে বাড়িতে ফোন দিয়ে পরিবারের সবার খোঁজখবর নেয় সে।’ তিনি বলেন, গতকাল ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পান তিনি। খবরটি তাঁর কাছে বজ্রাঘাতের মতো মনে হয়েছে। এটা দুর্ঘটনা না অন্য কিছু বুঝতে পারছেন না তিনি।

রাকিবুলের ছোট ভাই সাকিবুল ইসলাম বলেন, সৌদিপ্রবাসী চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন ফোন দিয়ে রাকিবুলের মৃত্যু সংবাদটি নিশ্চিত করেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা কেউ এই খবরের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে ভাই সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। এখন ভাইয়ের লাশ ফিরে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। সেখানে কী হয়েছিল, তা-ও জানতে পারছি না।’

রাকিবুলের ভগ্নিপতি মো. জীবন মিয়া বলেন, তাঁর শ্বশুরের কোনো জমিজমা নেই। একটি চায়ের দোকান চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। এলাকায় ধারদেনা করে ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলেকে হারিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ি এখন পাগলপ্রায়।

সৌদিপ্রবাসী চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, যানবাহনের চাপায় রাকিবুল নিহত হওয়ার পর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দেশে তাঁর (রাকিবুল) বাবাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায়। পরে বাড়ির লোকজন সৌদিতে ফোন দিয়ে খবরটি সম্পর্কে নিশ্চিত হন।