জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস

সচেতনতাই বড় চিকিৎসা

রাজশাহীতে ২০ থেকে ৩০ ভাগ মানুষ ডায়াবেটিসে ভোগেন। চিকিৎসকের পরামর্শমতো, ডায়াবেটিক রোগীরা টানা ৪০ মিনিট হাঁটেন।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেকে প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটেন রাজশাহী রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। গতকাল সন্ধ্যায়
 ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের এক মাথা থেকে অপর মাথায় হেঁটে যেতে সময় লাগে চার মিনিট। একবার ঘুরে আসতে লাগে আট মিনিট। কলেজশিক্ষক নজরুল ইসলাম প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাঁচবার করে এই প্ল্যাটফর্ম প্রদক্ষিণ করেন। তিনি শুধু একা নন, একইভাবে তাঁর সঙ্গে ৮-১০ জন হাঁটেন। তাঁদের বেশির ভাগই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শমতো, তাঁদের টানা ৪০ মিনিট হাঁটতে হয়। এই প্ল্যাটফর্মে হাঁটলে তাঁদের আর ঘড়ি দেখতে হয় না। পাঁচবার এ মাথা ও মাথা করলেই হয়ে যায়।

আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস’। ডায়াবেটিস সমিতির ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিবসটি পালন করা হয়। এ উপলক্ষে রাজশাহী ডায়াবেটিস সমিতি জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সচেতনতার জন্য আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগের রোগীদের নিয়েই এই আলোচনা হবে। এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের জরিপ অনুযায়ী, রাজশাহীতে ২০ থেকে ৩০ ভাগ মানুষ ডায়াবেটিসে ভোগেন।

কলেজশিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে ডায়াবেটিস চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ডায়াবেটিস হাসপাতাল। সেই হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শেই তাঁরা হাঁটেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাওয়া–দাওয়া করেন। তাঁদের মনে হয়েছে, এই চিকিৎসা মানসম্মত। কারণ, সচেতনতার যে পরামর্শ তাঁরা দেন, তাতেই তাঁরা সুস্থ রয়েছেন। এই দলে হাঁটেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষক আনিসুজ্জামান। তিনিও এই সচেতনতার কথাই বললেন। হাঁটাহাঁটি ও খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সুস্থ রয়েছেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস হয়নি এমন কয়েকজনও আছেন, যাঁরা নিজের সুস্থতা ধরে রাখার জন্য এই প্ল্যাটফর্মে হাঁটেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সুস্থতার জন্য রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকার একদল মানুষ সকাল বেলায় দলবেঁধে হাঁটেন। হাঁটতে হাঁটতে তাঁরা একটি সংগঠনই তৈরি করে ফেলেছেন। সেই সংগঠনের নাম দিয়েছেন তাঁরা ‘ভোরের পাখি’। তাঁরা এই সংগঠনের ব্যানারে চড়ুইভাতিরও আয়োজন করেন। এই সংগঠনের সদস্য বানেশ্বরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভোরের পাখির সদস্য হয়ে তাঁরা সুস্থ আছেন। তাঁদের সংগঠনে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি তাঁদের সচেতনতামূলক সব পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁরা এই সংগঠনের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বনভোজন করতেও যান। করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁরা একটু এলোমেলো হয়ে গেছেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আবার সাংগঠনিক কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, এই সংগঠনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সচেতনতার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিজেরা সুস্থ থাকা।

জাহিদুল ইসলাম নামের গ্রামীণ ব্যাংকের একজন কর্মচারী জানান, তাঁর অল্প বয়সে সবচেয়ে উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস ধরা পড়েছিল। তাঁকে ইনসুলিন নিতে হয়েছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে তাঁকে এখন আর ইনসুলিন নিতে হয় না।

রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর ঝাউতলার মোড়ে অবস্থিত ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল রাজশাহীতে ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য বারডেম হাসপাতাল অনুমোদিত একমাত্র হাসপাতাল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির আগে এই হাসপাতালে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিতেন। এখনো প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ রোগী চিকিৎসা নেন। এখানে মাত্র ৯০ টাকায় সুগার টেস্ট করার সুবিধা রয়েছে।

হাসপাতালের উপপরিচালক মামুনুর রহমান বলেন, বিশ্বে সচেতনতার চেয়ে ডায়াবেটিসের বড় চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। নিয়ম মেনে চলাই হচ্ছে এর বড় চিকিৎসা। তিনি বলেন, তাঁদের হাসপাতালে ৪২ জন চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁরাই ডায়াবেটিস সমিতির ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন।

মামুনুর রহমান বলেন, জাতীয়ভাবে বলা হয়, ২০ থেকে ২৫ ভাগ মানুষ ডায়াবেটিসের রোগী। রাজশাহীতে তাঁরা বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ ডায়াবেটিসের রোগী পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত হওয়ার কারণে এই সমস্যা বেশি। ভাত পেট পুরে খাবার অভ্যাস সবার। আমরা দুই বেলা রুটি খাওয়ার পরামর্শ দিই। যদিও ভাত ও রুটিতে একইভাবে শর্করা থাকে। তবে রুটি ভাতের চেয়ে কম খাওয়া যায় বলেই শরীরে শর্করার পরিমাণ কমে যায়।’ তিনি আরও বলেন, বয়স ৪০-এর বেশি হলে এমনিতেই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করা ভালো। আগে থেকেই সচেতন হলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়।