নিহত সগিরের স্বপ্ন ছিল সংসারের অভাব-অনটন দূর করে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাবেন।
সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ রোববার। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তরুণ সগির হোসেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঘটকের আন্দুয়া গ্রামে। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। ভবনধসে নিহত হওয়ার দুঃসহ স্মৃতি আজও কষ্ট দেয় তাঁর স্বজনদের।
সাত ভাইবোনের মধ্যে সগির (২০) ছিলেন পঞ্চম। তাঁর স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে ভালো একটি চাকরি করবেন। সংসারের অভাব-অনটন দূর করে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাবেন। এইচএসসি পাস করে কাজের সন্ধানে সগির গিয়েছিলেন ঢাকায়। কাজও পেয়েছিলেন সাভারের রানা প্লাজার নিউ স্টাইল লিমিটেডের জিপিকিউ সহকারী পদে। পাশাপাশি ঢাকার বাঙলা কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। রানা প্লাজা ধসের দিন ২৪ এপ্রিল বিকেলে সগিরের লাশ উদ্ধার করা হয় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে।
ছেলে হারানোর কষ্ট বুকে নিয়ে কয়েক মাস আগে সগিরের বাবা সেকান্দার আলী মারা গেছেন। আর মা খাজিদা বেগম মারা গেছেন দুই বছর আগে। তাঁদের গ্রামের বাড়িতে এখন আর কেউ থাকেন না। সগিরের বড় ভাই মিজানুর রহমান ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে মাঠ কর্মকর্তা (ফিল্ড অফিসার) হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘সগির খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। পরিবারের সবার আদরের ছিল সে। সে আমাদের সান্ত্বনা দিত, লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করে আমাদের মুখে হাসি ফোটাবে। রানা প্লাজায় ছয়তলায় কাজ করত সগির। তার আরেক সহপাঠী আগেই ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখতে পেয়েছিল। এমনকি চক দিয়ে ফাটলের স্থানে দাগ দিয়েও রেখেছিল তারা। মৃত্যুর এক দিন আগে পরিবারের অনেকের সঙ্গে মুঠোফোনে সগির সেই ফাটলের কথা জানিয়েছিল। ঘটনার আগের দিন সে কাজে যেতে ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু বেতন বন্ধের হুমকি দিয়ে সুপারভাইজার তাদের কাজে যেতে বাধ্য করেছিল।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, সগিরের দাফনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরে আরও এক লাখ টাকা তাঁরা পেয়েছেন।