সংস্কারের অভাবে ঢাকা-পেন্নাই-মতলব সড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশ বেহাল হয়ে পড়েছে। কার্পেটিং উঠে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্তের। এ অবস্থায় সড়কটি সংস্কারের দাবিতে গতকাল রোববার ওই সড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়ে মানববন্ধন করেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা।
সড়কের গৌরীপুর, বারইকান্দি, বিটেশ্বর, নৈয়ার, পালেরবাজারি ও কানাচোয়া এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে গাছ ও ড্রাম ফেলে এবং যানবাহন আড়াআড়ি করে রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। পাশাপাশি তাঁরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) দাউদকান্দির গৌরীপুর কার্যালয় ঘেরাও করেন।
গতকাল সকাল সাতটা থেকে মানববন্ধন শুরু হয়ে চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এ সময় চালকেরা বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী। বিকল্প সড়ক না থাকায় তাঁরা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কে যানবাহন চালাচ্ছেন। তাঁরা দ্রুত সড়কটি মেরামতের দাবি জানান।
এই সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক নৈয়ার গ্রামের ইকবাল হোসেন, স্বল্পপেন্নাই গ্রামের রিপন মিয়াসহ আরও কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটি বেহাল হওয়ায় ধীরগতিতে যানবাহন চালাতে হয়। এ কারণে তাঁরা বিভিন্ন সময়ে ডাকাতের কবলে পড়েছেন। ডাকাতেরা তাঁদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছে। অনেকে ডাকাতের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কুমিল্লা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ঢাকা-পেন্নাই-মতলব সড়কের দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার। এর মধ্যে দাউদকান্দি অংশে পড়েছে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে সড়কটিতে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ, প্রশস্তকরণ, বাঁক সোজাকরণসহ অন্য সংস্কারকাজ শুরু হয়। ২০১০ সালের জুনে শুরু হওয়া ওই কাজটি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে ২০১১ সালের জুনে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হওয়ার একপর্যায়ে গতকাল সব ধরনের যানবাহনের চালকেরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করলেন।
স্বল্পপেন্নাই গ্রামের মহসীন হোসেন, বিটেশ্বর গ্রামের আবদুল হালিম, মাদলা গ্রামের জালাল মিয়া, চক্রতলা গ্রামের মিলন মিয়াসহ প্রায় ৪০ জন চালক বলেন, এ সড়কে যানবাহন চালাতে গিয়ে তাঁরা শারীরিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই সড়কটি সংস্কারকাজ শুরু করার দাবি জানান তাঁরা।
মতলব এক্সপ্রেস বাসের চালক আবদুল কুদ্দুস ও জৈনপুরী এক্সপ্রেস বাসের চালক আরিফ হোসেন বলেন, মৃত্যুর ঝুঁকি ও আতঙ্ক নিয়ে এ সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। কোনো কোনো জায়গায় সড়কের পাশে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত মাটি নেই। অন্য গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে যেকোনো সময় বাস উল্টে সড়কের পাশের খাদে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। মতলব এক্সপ্রেস বাস মালিক সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান ও জৈনপুরী এক্সপ্রেসের বাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল সরকার বলেন, গর্তে ভরা সড়কে বাস চালাতে গিয়ে বাসের চাকা ফেটে যায় এবং চেসিসসহ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। দু-এক দিন পরপর বাস বিকল হয়ে পড়ে।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটির দাউদকান্দির পেন্নাই থেকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার অংশ ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। অনেক স্থানে এমনভাবে কার্পেটিং ও খোয়া উঠে গেছে, মনে হবে সড়কটি কখনো পাকা ছিল না।
স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী বলেন, এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে তাঁদের প্রতিদিন তীব্র ঝাঁকুনি সহ্য করতে হয়। আর গতকাল যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ৮ থকে ১২ কিলোমিটার পথ হেঁটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্কুল–কলেজে যেতে হয়েছে। যশোরের ঝিনাইদহ উপজেলার কোটচাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী, মা, বোন ও সন্তানদের নিয়ে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুরে বড় বোন শেফালী আক্তারের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। রোববার সকালে কুমিল্লার দাউদকান্দির পেন্নাই এলাকায় পৌঁছার পর দেখেন সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে তাঁদের ফিরে যেতে হয়েছে।
দাউদকান্দি মডেল থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়কের অবস্থা এতই নাজুক যে রাতে টহল দিতে গিয়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না।
সড়কটি সংস্কারের বিষয়ে সওজের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রমিজ উদ্দিন গতকাল বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু করার বিষয়ে তিনি চেষ্টা করছেন।