তেল, আটা, লবণ, চিনিসহ সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন রিকশাচালক কুতুব শেখ (৩৯)। তাঁর আশঙ্কা, সামনে আরও কঠিন দিন আসছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকবেন, সেই চিন্তায় রাতে তাঁর ঘুম আসে না।
কুতুব শেখ থাকেন ফরিদপুর পৌরসভার ভাজনডাঙ্গা এলাকায় সড়ক বিভাগের জায়গায়। নিজের কোনো জমি নেই। স্ত্রী, দুই মেয়ে, অসুস্থ মা ও ছোট ভাই নিয়ে তাঁর সংসার।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কুতুব শেখের মতো শঙ্কায় রয়েছে শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। কীভাবে সামনের দিনগুলো কাটবে, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত।
ফরিদপুর শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা খাদিজা বেগম। তিনি বলেন, ‘সংসারে সদস্য পাঁচজন। স্বামী, ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি। খুব কষ্টে আছি। সংসার আর চলছে না। আমাদের তো আর বাঁচার উপায় নেই।’
সারা দেশের মতো ফরিদপুরেও বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। শহরের অন্যতম বড় কাঁচাবাজার হিসেবে পরিচিত হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজার। এক মাসের ব্যবধানে এই বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৩০ থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা, সোনালিকা ২৪০ থেকে বেড়ে ২৮০, লেয়ার ২১০ থেকে বেড়ে ২৮০ ও দেশি মুরগি ৪৮০ থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ৯৫০ টাকা কেজি। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা দরে।
ওই বাজারের খুচরা বিক্রেতা ফরিদপুর সদরের মুমিনখার হাট এলাকার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন (৩৫) আহমেদ বলেন, আলু ২০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫, কাঁচা মরিচ ১০০ ও পটোল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
হতাশার সুরে মাছ বিক্রেতা ফরিদপুর সদরের ধুলদী এলাকার সুনীল মালো (৬১) বলেন, বাজারে মাছের দাম বাড়েনি। তবে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাছ বিক্রি কমে গেছে। তেল ছাড়া তো আর মাছ রান্না চলে না।
শহরের ময়রাপট্টি এলাকার মুদি ব্যবসায়ী বাবন স্টোরের মালিক শহরের চকবাজার এলাকার বাবন সাহা (২৮) বলেন, ক্রেতারা বাজারে এসে হাঁসফাঁস করেন। জিনিসপত্রের দাম বেশি। আগে একজন ক্রেতা যে পরিমাণ পণ্য কিনতেন, এখন তার চেয়ে কম কেনেন।
চাল বিক্রেতা শহরের রথখোলা এলাকার দীপক কুমার সাহা (৫৭) বলেন, এখন চালের ভরা মৌসুম। দাম যেভাবে কমার কথা, চালের সেভাবে কমছে না। বড় মিলাররা চাল কিনে গুদামজাত করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আদি ফরিদপুর বস্ত্রালয়ের মালিক শহরের পূর্ব খাবাসপুর এলাকার বাসিন্দা সুধীর কুমার সাহা (৫৬) বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়ায় মানুষের কাপড় কেনা কমে গেছে। তাঁর দোকানেও বেচাকেনা কম।
শহরের লঞ্চঘাটা এলাকার গৃহবধূ রুমা আহমেদ (২৮) বলেন, জিনিসপত্রের দাম তো অনেক বেশি। বাঁচার জন্য তো খেতে হবে। দাম বেশি হলেও কিনতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার জ্ঞানদিয়া এলাকার আবু তালেব (৫৬) কৃষিকাজ করেন। জমিতে মজুর দিয়ে কাজ করান। তিনি বলেন, আগে ৪০০-৫০০ টাকায় দিনমজুর পাওয়া যেত। এখন ৮০০-৯০০ টাকা লাগে। কৃষিপণ্যের দাম না বাড়লে বাঁচার উপায় নেই।
একটি বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয় কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন সদর উপজেলার কানাইপুর এলাকার শরিফুল ইসলাম (৩১)। তিনি বলেন, ‘বেতন যা পাই, তাতে সংসার চলে না। প্রতি মাসে দেনা করতে হচ্ছে।’