জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি) আসনের সংসদ সদস্য সামছুল আলমকে অবমাননার অভিযোগ তুলে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শরীফুল ইসলামের অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জয়পুরহাট শহরে ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করে এ দাবি জানানো হয়।
শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দান থেকে মিছিলটি বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। তবে এ বিক্ষোভ মিছিলে জেলা আওয়ামী লীগের পদধারী কাউকে দেখা যায়নি। মিছিলে অংশ নেওয়া সবাই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এবং সামছুল আলমের অনুসারী।
মিছিলে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের কর্মীরা জেলা প্রশাসক ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগান দিয়েছেন। পরে তাঁরা পৌর কমিউনিটি সেন্টারে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সামছুল আলম এই ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য সামছুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম সোলায়মান আলী, রাজা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরীসহ অনেকে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংসদ সদস্য সামছুল আলম জয়পুরহাট সদর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। গতকাল মঙ্গলবার ওই হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়। একই দিন বিকেলে একই নির্বাচনী এলাকার পাঁচবিবি পৌরসভায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও সংগ্রহশালার উদ্বোধন করা হয়। এই দুটি সরকারি অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য সামছুল আলম উপস্থিত ছিলেন না। সংসদ সদস্যের দাবি, ওই দুই অনুষ্ঠানে তাঁকে দাওয়াতই দেওয়া হয়নি।
সামছুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা আমার নির্বাচনী এলাকা। গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালের ডায়ালাইসিস সেন্টার ও পাঁচবিবি পৌরসভায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত করা হয়নি। জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ ডায়ালাইসিস সেন্টারের উদ্বোধন করেছেন। কে উদ্বোধন করল, সেটাতে আমার আপত্তি নেই। আমি তো দাওয়াত পেতে পারতাম।’
বিক্ষোভ মিছিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে সামছুল আলম বলেন, ‘আমি আনুষ্ঠানে থাকলে ডিসি সেই অনুষ্ঠানে যান না। আবার জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত করা হয় না। দলীয় নেতা-কমীরা আমাকে অবমাননার বিষয়টি মেনে নেননি। এ কারণে তাঁরা ডিসি ও তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন।’
সামছুল আলমের অনুসারীরা অভিযোগ করে বলেন, ডিসি শরীফুল ইসলাম রাজনীতি করছেন। তিনি সামছুল আলমের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন। গতকাল সরকারি দুটি অনুষ্ঠানে ডিসির ইন্ধনে তাঁকে দাওয়াত করা হয়নি। এই ঘটনার মাধ্যমে সংসদ সদস্যকে অবজ্ঞা ও অবমাননা করা হয়েছে। এ কারণে তাঁরা ডিসি শরীফুল ইসলাম ও জয়পুরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সরদার রাশেদ মোবারকের অপসারণ চান তাঁরা।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতাল ও পাঁচবিবি পৌরসভার ওই দুটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়নি। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও পাঁচবিবির পৌরসভার প্রশাসক অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন। সংসদ সদস্য মহোদয় আমাকে ভুল বুঝেছেন। জেলা প্রশাসনের সব অনুষ্ঠানে তাঁকে দাওয়াত করা হয়। আমি তাঁর অনুষ্ঠানে যাই না, এটা সঠিক নয়। আমি এখানে চাকরি করতে এসেছি।’
জয়পুরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রাশেদ মোবারক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজে মুঠোফোনে সংসদ সদস্য সামছুল আলমকে দাওয়াত করেছেন। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে আসেননি।