বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল

‘সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক চাই না’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় অবস্থিত লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন এলাকা পরিদর্শন করেন।
প্রথম আলো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক হলে বনের পরিবেশ বদলে যাবে। মানুষকে পুনর্বাসন করা সম্ভব। কিন্তু বনের পরিবেশ, জীবজন্তুকে পুনর্বাসন করা সম্ভব নয়। সাফারি পার্ক করতে হলে বিকল্প জায়গায় করা যেতে পারে। সাফারি পার্ক হোক। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ুক, বিনোদনের জায়গা বাড়ুক। কিন্তু সংরক্ষিত বনে তাঁরা সাফারি পার্ক চান না।

আজ মঙ্গলবার সুলতানা কামাল মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। ৫ হাজার ৬৩১ একর আয়তনের ক্রান্তীয় এই চিরসবুজ বনে সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বন বিভাগ। এ কাজে প্রায় ৯৮০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে ২৮ জুলাই প্রথম আলোয় ‘সংরক্ষিত বন “ধ্বংসের” আয়োজন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বাপা সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে সুলতানা কামালের নেতৃত্বে বাপার আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল লাঠিটিলা বনের লালছড়া এলাকায় যায়। এ সময় দলের সদস্যরা বনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। তাঁরা বনে বসবাসকারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। দলে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, জাতীয় পরিষদ সদস্য শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জহিরুল হক, বাপার সিলেট জেলা কমিটির সহসভাপতি নাজিয়া চৌধুরী, আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক জোসেফ গমেজ প্রমুখ ছিলেন।

সুলতানা কামাল বলেন, সাফারি পার্ক আর সংরক্ষিত বনের চরিত্র এক নয়। আবার সব বনের চরিত্রও এক নয়। একেক বনের চরিত্র একেক রকমের। সাফারি পার্ক হলে বনের প্রকৃতিগত পরিবর্তন আসবে। এটার পরিবর্তন মানে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন।

তিনি আরও বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে, দেশের মালিক জনগণ ও দেশের সম্পদের মালিক জনগণ। যে যেখানে বাস করে, সেখানকার সম্পদের ওপর জনগণের অধিকার রয়েছে। যেকোনো পরিবর্তন আনতে হলে ওই স্থানের জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে (সাফারি পার্কের পরিকল্পনা) সেটার ব্যত্যয় ঘটেছে। এখানকার মানুষ তাঁদের সম্পদ, জাতীয় সম্পদ রক্ষায় কাজ করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ বা নীতিনির্ধারকেরা যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, আচরণ করা হচ্ছে, তাঁরা এটার নিন্দা জানাচ্ছেন। জোর করে সম্মতি আদায়ের চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।

সুলতানা কামাল অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে কথা উঠেছে, কিছু লোক অনেক কষ্ট করে নাকি এ প্রকল্প (সাফারি পার্ক) এনেছেন। আমরা এটার প্রতিবাদ করছি। এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী কারা?’

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, লাঠিটিলা বনে সাফারি পার্ক নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনার কথা শুনে তাঁরা এখানে এসেছেন। তবে বিশদভাবে পরিকল্পনার বিষয়টি তাঁরা জানেন না। তাঁরা এখানকার মানুষের মতামত জানার চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানার চেষ্টা করবেন। এর আলোকে পরবর্তী সময়ে সাংগঠনিক উদ্যোগ নেওয়া হবে।