বাংলাদেশের সংবিধানকে সত্যিকার অর্থে একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান করার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অনুপম সেন। তিনি বলেছেন, ১৯৮৮ সালে এরশাদ যে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিল, তা বাদ দিতে হবে।
সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন এই দাবি জানান। ‘সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিকবৃন্দের’ ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ সময় অনুপম সেন বলেন, ‘যদি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকে, তবে অন্যরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। যদি বলেন, সবাই নাগরিক, তবে তো রাষ্ট্রধর্ম থাকতে পারে না। কোনো উন্নত রাষ্ট্রে তা নেই। কয়েকটি দেশে আছে, রাষ্ট্রধর্ম প্রত্যাহার করুন।’ তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। প্রশ্ন করতে পারেন, কী করেছেন আপনারা? আমরা একটি আধুনিক বাংলাদেশ করতে চেয়েছিলাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র ১০ মাস পর বঙ্গবন্ধু এক অসাধারণ সংবিধান দিয়েছিলেন। হিন্দু বা মুসলমানের নয়, চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল সেই সংবিধান।’
গণমাধ্যমের উদ্দেশে অনুপম সেন বলেন, ‘আপনারা লিখুন “বাংলাদেশ রুখিয়া দাঁড়াও”। বাংলাদেশ আর সাম্প্রদায়িক দেশ হবে না।’ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, ‘আজ ছাত্রলীগকে মাঠে দেখি না, বসে বসে বিবৃতি দেন। এত বড় সংগঠন আওয়ামী লীগের, তারপরও তারা রাস্তায় নেই কেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন শাস্তি হবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন তদন্ত চলছে। এত দিন কেন তদন্ত চলবে, অবিলম্বে শাস্তির ব্যবস্থা নিন।’
সমাবেশে কবি আবুল মোমেন বলেন, মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা সংখ্যাগুরুর দায়িত্ব। যখনই সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে, বুঝতে হবে, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় দায়িত্ব পালন করেনি। আজ কোনো রাজনৈতিক দল মাঠে নামেনি। পাকিস্তান আমলে অভিন্ন শিরোনাম হয়েছিল ‘পূর্ব বাংলা রুখে দাঁড়াও’।
আবুল মোমেন আরও বলেন, ১০ বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়াজ মাহফিলের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, অন্য ধর্মকে হেয় করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। ১০ বছর পরও ওয়াজ মাহফিলে টার্গেট করা হয় হিন্দুধর্ম, নারী ও বিজ্ঞানকে। ১৯৪৭ থেকে হিন্দুদের ওপর বারবার হামলার প্রধান কারণ সম্পত্তি দখল। জাগতিক বস্তুগত লাভের কারণে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, আজকের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ নয়। এই বাংলাদেশের ভেতর পাকিস্তান আছে, দলের ভেতর খন্দকার মোশতাক আছে। এক–দুটি সভা করে সাম্প্রদায়িক হামলা থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পাবে না। তিনি আরও বলেন, দুই কোটি মানুষকে বিপর্যস্ত রেখে দেশ কোনোভাবে ভালো থাকে না। সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে না পারলে উপমহাদেশে বিপর্যয় অনিবার্য।