বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় দুই পরিবহনশ্রমিককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং তাঁদের মুক্তির দাবিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ রুটে বাস চলাচল বন্ধের ডাক দিয়েছে বাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন। অন্যদিকে এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ তিন দফা দাবিতে আজ শনিবার সকাল থেকে আবার মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে বরিশাল থেকে দক্ষিণের পাঁচ জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি পথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে এসব পথের যাত্রীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের টানা চতুর্থ দিনের আন্দোলনে বন্ধ আছে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের যান চলাচল। সকাল থেকে মহাসড়কে আটকা পড়েছে দক্ষিণের বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, কুয়াকাটার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার অসংখ্য যানবাহন। সকাল থেকে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে এবং বাঁশ, বেঞ্চ ও কাঠের তক্তা ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানে বাধা পেয়ে যানবাহন থেকে নেমে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছেন। দফায় দফায় মহাসড়ক অবরুদ্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এই সড়কের যাত্রীরা। এ ছাড়াও টানা তিন দিনের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশে আসা পর্যটকেরাও পড়েছেন বিপাকে।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশে এসেছেন চাকরিজীবী পরিমল চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে কুয়াকাটা যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলছে। এখন কী করব, বুঝতে পারছি না।’ শান্তা ইসলাম নামের আটকে পড়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমিও একজন শিক্ষার্থী। এখানে এসে শুনেছি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বিচার আমিও চাই। তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হোক, এটা একেবারেই কাম্য নয়।’ সাদ্দাম হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘এই সমস্যার সমাধান না হলে ভোগান্তি বাড়বে।’
অপরদিকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনালের সামনে সুরভী চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এ সময় তাঁদের সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং টায়ার জ্বালাতে দেখা যায়। রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে অসংখ্য যাত্রীকে অসহায় হয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। শহিদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী পরিবার নিয়ে পাথরঘাটায় যাওয়ার উদ্দেশে বাসস্ট্যান্ডে এসে শোনেন, বাস চলাচল বন্ধ। দুই দিন আগে চিকিৎসার জন্য তিনি স্ত্রী, ছোট দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে বরিশালে এসেছিলেন। তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘বিকল্প কোনো যানবাহনও নেই, জানি না কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছাব।’ বরগুনা যাওয়ার উদ্দেশে আসা অলিউল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে শুক্রবার বরিশালে এসে এখন আটকে গেছি। কখন ধর্মঘট শেষ হবে আর কখন বাড়ি যেতে পারব, কিছুই জানি না।’
রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এমন কয়েক হাজার যাত্রীকে গন্তব্যে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
রূপাতলী মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ আছে। আমাদের নিরীহ দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় ধর্মঘট চলবে।’
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে রূপাতলী হাউজিং এলাকার মেসে বসবাসরত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে পরিবহনশ্রমিকদের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বরিশাল-পটুয়াখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নগর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক কাওসার হোসেনের নেতৃত্বে ওই হামলা চালানো হয়।
কাওসার হোসেন অবশ্য এই অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন। তিনি আজ দুপুরে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আমাদের দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কোনো লোক ছাত্রদের ওপর হামলা চালাননি। আমরাও ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছি। গত মঙ্গলবার দুপুরে দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে বিআরটিসির বাস স্টাফদের। এরপর ওই দিন গভীর রাতে রূপাতলী হাউজিং এলাকায় পুনরায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। কারা হামলা করেছে, আমরা জানি না। তবে আমাদের কোনো শ্রমিক এতে জড়িত নন। দুই শ্রমিককে মুক্তি না দিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলবে।’
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন। ওদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করছেন। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।