ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার না করায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনির ৩০টি গ্রাম এখনো প্লাবিত হচ্ছে। পাঁচ দিন আগে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। অনেক স্থানে বাঁধ সংস্কার করা হলেও শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কয়েকটি এলাকার বাঁধ এখনো ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ৩০ গ্রামের মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ২৬ মে জলোচ্ছ্বাসে শ্যামনগরে ১২টি, আশাশুনির ১০টি, কালীগঞ্জে ১২টি ও দেবহাটায় তিনটি স্থানে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে কিংবা উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী ও রমজাননগর; আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর,খাজরা ও বড়দল; কালীগঞ্জের দক্ষিণ শ্রীপুর, কুশলিয়া, মথরেশপুর ও ধলবাড়িয়া এবং দেবহাটার পারুলিয়া ও দেবহাটা ইউনিয়নে ঘরবাড়ি ও ফসলের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া, চকবারা, হরিশখালী, গাইনবাড়ি, বড়গাবুরা, ছোটগাবুরা, লক্ষ্মীখালী ও নাপিতখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি, পুড়াকাটলা, কলবাড়ি; পদ্মপকুর ইউনিয়নের পাতাখালী, ঝাপা, বন্যতলা, খুটিকাটা, কামালকাটি, পাখিমারা, সোনাখালী, চণ্ডীপুর; আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের শুভ্রকাটি, রুইয়েরবিল, দিখলারআইট, সোনাতনকাটি, গোকুলনগর, কল্যাণপুর, কুড়িকাউনিয়া, হরিশখালী, শ্রীপুর, লস্কারিখাজরা গ্রাম এখনো জোয়ার–ভাটা চলছে।
জোয়ারের কারণে অনেকের বাড়ির আঙিনায় আড়াই ফুট পানি থাকলেও ঘরের মধ্যে পানি ওঠেনি। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ২৫ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী। একই অবস্থা আশাশুনির সদর ইউনিয়ন, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপকুর ইউনিয়নের। আংশিক এলাকায় জোয়ার–ভাটা খেলছে বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী, রমজাননগর ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে। ঘরে পানি থাকায় মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে অন্য কোনো জেলায়।
প্রতাপনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ও মর্জিনা খাতুন জানান, আম্পানে তাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। ১০ মাস পর মাত্র দুই মাস আগে ভিটায় ফিরে গেছেন। আবার দুর্যোগ। এখন তাঁরা থাকবেন কী করে। মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই। এলাকায় কাজ নেই। তাই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
পদ্মপকুর ইউনিয়নের ঝাপা গ্রামের রহমত গাজী জানান, দুর্যোগ এলে কর্মকর্তারা এসে নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয় না। বর্তমানে তাঁদের এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাঁদের অন্য কোথাও চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার জানান, পাউবো বা সরকার সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন নকশা করে বাঁধ নির্মাণ করার জন্য তাঁরা বারবার বলছেন, আন্দোলন–সংগ্রাম করছেন। কিন্তু কিছুইতেই কিছু হচ্ছে না। তিনি বিচ্ছিন্ন গাবুরা, পদ্মপুকুর ও প্রতাপনগর ইউনিয়ন বসবাসের অনুযোগী ঘোষণা করে ওই এলাকার বাসিন্দাদের অন্য এলাকার সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।
পাউবো–১ সাতক্ষীরা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, গাবুরার ৩ নম্বর ও নেবুবুড়িয়ার তিন স্থান ছাড়া অন্য স্থানগুলো ইতিমধ্যে বেঁধে পানি আটকানো গেছে। এ তিন স্থানের মেরামতের চেষ্টা চলছে।
পাউবো–২ সাতক্ষীরা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরার প্রতাপনগর ও পদ্মপকুর ছয় স্থানে মেরামত করা যায়নি। কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার ৬ হাজার ৭৩২ হেক্টর জমির ৭ হাজার ৪৬৮টি ঘেরের মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় ১৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।