‘তোমরা আম্পনের সময় আমাগে খাদ্য দেছলে। তাতে আমাগে উপগার হইলো। তোমাগে কম্বল পাইয়ে শীতের কষ্ট থেকে বাঁচতি পারবুনে।’
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের শিংহড়তলী প্রথম আলো দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রে আজ রোববার বেলা ১১টায় কম্বল নিতে এসে এই মন্তব্য করেন যতীন্দ্রনগরের নেছা বিবি। সাতক্ষীরা থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনঘেঁষা শ্যামনগরের ২ ইউনিয়নে নেছা বিবির মতো ২০৫ শীতার্তের হাতে কম্বল পৌঁছে দিয়েছেন বন্ধুসভার সদস্যরা। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়।
রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুই স্থানে কম্বল বিতরণ করা হয়। এর আগের সাতক্ষীরা বন্ধুসভার সদস্যরা মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চুনকুড়ি, ভেটখালী, সিংহড়তলী, জেলেপাড়া মথুরাপুর, যতীন্দ্রনগর বাড়ি বাড়ি গিয়ে শীতার্ত বয়স্কদের তালিকা তৈরি করেন। রোববার সকাল ১০টা থেকে শ্যামনগরের শিংহড়তলী প্রথম আলো দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রের সামনের মাঠে তালিকাভুক্ত মানুষ আসা শুরু করেন। বেলা ১১টার দিকে ওই মাঠে ১২৫ শীতার্তের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
সৌরভ বালার বয়স প্রায় ৮০ বছর। ঠিকমতো চলতে পারেন না। চোখেও কম দেখেন। রোববার কম্বল নিতে এসে তিনি বলেন, ‘ছিঁড়া কাঁথা গায় দে শীত যাইতো না। খুব কষ্ট পেতিলাম। তোমাগে কম্বল পাইয়ে খুব ভেলো লাগদে। এ কম্বল গায় দে শীত থেকে নিহাই পাবুনে।’
সিংহড়তলী গ্রামের সাফেত আলীর বয়স ৮০ পেরিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘শীত একটু কম ছেলো। গত দুই দিন আবার শীত পড়তে। এ সময় কম্বল পেয়ে শীত থেকে বাঁচতি পারবুনে।’
একইভাবে বন্ধুসভার সদস্যরা আগে থেকেই বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি, বুড়িগোয়ালিনী ও নীলডুমুর গ্রামের বাড়ি বাড়ি যেয়ে শীতার্ত ৮০ জন মানুষের তালিকা তৈরি করে। বেলা দেড়টা থেকে দাতিনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালিকাভুক্ত মানুষ জড়ো হন। বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে বন্ধুসভার সদস্যরা ৮০ জনের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন।
দাতিনাখালী গ্রামের বিলকিস বানু (৭০) বলেন, কম্বল পেয়ে উপকার হয়েছে। গ্রামের মানুষ এ কম্বল দিয়ে শীত নিবারণ করতে পারবে।
শ্যামনগরে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বনশ্রী মাধমিক বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ধ্রুবজ্যোতি মল্লিক, বাপ্পী বিশ্বাস, সিংহড়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রব, মুন্সিগঞ্জ কলেজের শিক্ষক সামিউল মনির, প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি মারিয়ম কেয়া, সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক হোসেন আলী, পাঠচক্র সম্পাদক মৌটুসি চ্যাটার্জী, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ইমরুল তুহিন, বন্ধুসভার উপদেষ্টা জাহিদা জাহান, সহসভাপতি রবিউল ইসলাম, শুভ্রত হালদার, সমাজকল্যাণ–বিষয়ক সম্পাদক বৈশাখী চ্যাটার্জী ও প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি।