২০ বছরের তরুণ মো. শাকিল বাবু। করোনা মহামারির এই সময়ে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন রোগীদের বাড়িতে। এ জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেন না। শাকিল নিজের মোটরসাইকেলে করে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে ছুটে চলছেন দিনরাত।
এই সংকটকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া রোগীদের ভরসা এখন শাকিল। তাঁর বাড়ি উপজেলার টিকিকাটা গ্রামে। তিনি মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
গত রোববার রাতে করোনায় আক্রান্ত মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী গ্রামের খাদিজা বেগমের (৬৫) শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। খাদিজা বেগমের স্বজনেরা অক্সিজেনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেন। পরে এক ব্যক্তি তাঁদের শাকিলের ফোন নম্বর দেন। কল পেয়ে রাত ১০টার দিকে সাত কিলোমিটার দূরে খাদিজা বেগমের বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন শাকিল। ওই রাতে খাদিজা বেগমকে অক্সিজেন দিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শাকিল বাবু বলেন, পার্শ্ববর্তী ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম পরিচালিত মিরাজুল ইসলাম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন থেকে রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ আগে শাকিল ওই ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচটি অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করেন। এরপর শাকিল অক্সিজেন প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর মুঠোফোন নম্বর দিয়ে একটি পোস্ট দেন। তিন দিন আগে পোস্ট দেখে মঠবাড়িয়া পৌরসভার সবুজনগর গ্রামের করোনা রোগী দিলীপ সিকদারের (৬৮) স্বজনেরা শাকিলকে ফোন দেন। তিনি দিলীপ সিকদারের বাড়ি অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে যান।
শাকিল বলেন, ‘করোনা রোগীদের শরীরে হঠাৎ করে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। আমি ফোন পেলে রোগীর বাড়িতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে চলে যাই। মূলত, রোগীকে হাসপাতাল পর্যন্ত নিতে আমরা অক্সিজেন দিয়ে সহায়তা করি। হাসপাতালে নেওয়ার পর রোগীকে সেখানের অক্সিজেন দেওয়া হয়। গত এক সপ্তাহে অন্তত আটজন রোগীর বাড়িতে অক্সিজেনর সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছি।’
মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. ফেরদৌস ইসলাম বলেন, করোনায় আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ কারণে তাঁদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে জরুরি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। একজন কলেজছাত্র শাকিল রোগীদের বাড়িতে গিয়ে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন। মানুষের দুঃসময়ে তিনি পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়।