রংপুরে নীল চাষ

শোষণের নীলে এখন সম্ভাবনার হাতছানি

স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও নীলের চাহিদা বাড়ছে। নীলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

নীলের রঙে চুবিয়ে নকশিকাঁথাসহ নানা পণ্য বানিয়ে তা বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। সম্প্রতি রংপুরের রাজেন্দ্রপুরে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

‘জাত মাল্লে পাদরি ধরে, ভাত মাল্লে নীল বাঁদরে’, নীল দর্পণ নাটকে নীলকরদের অত্যাচারের চিত্র এভাবেই তুলে ধরেছিলেন দীনবন্ধু মিত্র। ইউরোপের চাহিদা মেটাতে কৃষকদের জোর করে নীল চাষ করতে বাধ্য করত ব্রিটিশরা। নীলকরদের অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে এখনো অনেক জায়গায় টিকে আছে নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ।

এখন দিন পাল্টেছে। নীল চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন রংপুরের কৃষকেরা। প্রাকৃতিক নীলের চাহিদা বাড়ায় আগামী দিনে দেশের স্থানীয় বাজারেই নীলের চাহিদা এক টনে পৌঁছাবে, এমনটা মনে করছেন নীল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিরা। নীল রপ্তানিও হচ্ছে।

তবে সরকার এখন পর্যন্ত নীলকে সম্ভাবনাময় অর্থকরী পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। রপ্তানিতে প্রণোদনার তালিকায় বিভিন্ন অপ্রচলিত পণ্য থাকলেও নীল নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, সরকারি পর্যায়ে নীল নিয়ে সেভাবে চিন্তাভাবনাই শুরু হয়নি।

রংপুরের ৩০০ একরের কিছু বেশি জমিতে নীল চাষ হচ্ছে। সাতটি দেশে নীল রপ্তানি হচ্ছে। এক টন নীল উৎপাদনে খরচ হয় ২২ লাখ টাকা। বাজারমূল্য ৪০ লাখ টাকা।

এই নীল শোষণের নয়

নীলগাছ

ইংরেজরা নীলকে কৃষকদের শোষণ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। নীল দর্পণ নাটকে একটি গানের লাইন ছিল, ‘হে নিরদয় নীলকরগণ/ আর সহে না প্রাণে এ নীল দহন/ কৃষকের ধনে প্রাণে, দহিলে নীল আগুনে।’ ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে কৃষকেরা ব্রিটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন।

তবে সম্প্রতি রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কথা হলো আধুনিক নীলচাষিদের সঙ্গে। এই নীল ইংরেজদের সেই নীল নয়। এই নীলে রক্তের দাগও নেই। কৃষকদের হাসিমুখ বলে দিচ্ছিল, নীল নিয়ে তাঁরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

নীল বিদ্রোহের পর নীল চাষ বন্ধ হলেও বাংলাদেশে, বিশেষ করে রংপুরে নীলগাছ বিলুপ্ত হয়নি। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হতো ‘মালখড়ি’। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য কৃষকেরা জমিতে নীলগাছ লাগিয়ে রাখতেন। আর বর্তমানে নীল চাষে যুক্ত কৃষকেরা জানেন, গাছের যেকোনো অংশ মাটিতে পড়ে পচে গিয়ে প্রাকৃতিক সারের কাজ করে। নীলগাছ জমির নাইট্রোজেনের মাত্রা ঠিক রেখে উর্বরতা বাড়ায়।

বাংলাদেশে ১৯৮০-র দশক থেকে নীল চাষ শুরু হয়। শুরু হয় নীল নিয়ে গবেষণা। ২০০৫ সাল থেকে রংপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর ও গঙ্গাচড়া উপজেলার পাগলাপীরের হরকলি ঠাকুরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নীল চাষ হয়। বর্তমানে রংপুরে দুটি বেসরকারি সংগঠন নীল তৈরি করছে। এগুলো হলো কেয়ার বাংলাদেশের লিভিং ব্লু প্রাইভেট লিমিটেড ও ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ।

সম্প্রতি রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কথা হলো আধুনিক নীলচাষিদের সঙ্গে। এই নীল ইংরেজদের সেই নীল নয়। এই নীলে রক্তের দাগও নেই। কৃষকদের হাসিমুখ বলে দিচ্ছিল, নীল নিয়ে তাঁরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
নীলগাছের আড়াই শ কেজি সবুজ পাতা থেকে এক কেজি নীল পাওয়া যায়

সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে কৃষকদের নীল চাষে বীজ সরবরাহ করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে কিনে নেওয়া হয় পাতা। কৃষকেরা নীলগাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন। সংগঠন দুটো নিজেরা কিছু নীল ব্যবহার করে। এ ছাড়া কুমুদিনী, অরণ্য ক্র্যাফট লিমিটেডসহ প্রাকৃতিক রং ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থা এখনকার নীলের বড় ক্রেতা।

রংপুরে বর্তমানে কৃষকেরা বিভিন্ন সড়কের পাশের খালি জায়গাতেও নীল চাষ করছেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি নীলের বীজ বুনতে হয়। নীল অনেকটা ধঞ্চেগাছের মতো, এতে তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না। বীজ বোনার ৯০ দিন পর পাতা কাটার উপযোগী হয়। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে নীলের পাতা কাটা শুরু হয়। আগস্ট মাস পর্যন্ত তিনবার গাছ থেকে পাতা কাটা হয়। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ সংগ্রহের জন্য গাছগুলো জমিতেই থাকে। অক্টোবর মাসে বীজ সংগ্রহ করা হয়।

রংপুরের গঙ্গাচড়ার কৃষক কৃষ্ণ রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে নীল চাষ করে লাভবান হয়েছেন। ২৫ শতক জমিতে নীল চাষ করে তাঁর খরচ হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। এখান থেকে তিনবার নীলের পাতা বিক্রি করে তিনি আয় করেছেন ৪ হাজার ৫০০ টাকা। কৃষ্ণ রায় বললেন, প্রথমবার নীল চাষের পর পরবর্তী চাষে জমিতে সারও খুব কম দিতে হয়।

বিধান রায় নামের আরেক কৃষক বললেন, যখন হাতে কোনো কাজ থাকে না, তখন নীল চাষের এ টাকাটাই অনেক কাজে লাগে।

রংপুরে বর্তমানে কৃষকেরা বিভিন্ন সড়কের পাশের খালি জায়গাতেও নীল চাষ করছেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি নীলের বীজ বুনতে হয়। নীল অনেকটা ধঞ্চেগাছের মতো, এতে তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না। বীজ বোনার ৯০ দিন পর পাতা কাটার উপযোগী হয়।

সবুজ পাতা থেকে নীল

নীল তৈরিতে বিভিন্ন ধাপে সময়ের হেরফের হলে নীলের গুণগত মানের তারতম্য ঘটে

নীলগাছের মাথা থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত ডাল পাতাসহ কাটতে হয়। পাতা কাটার পর সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে পানিতে জাগ দিতে হয়। বড় চৌবাচ্চায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পাতা জাগ দেওয়ার পর একটি নির্যাস পাওয়া যায়। পরে আরেক চৌবাচ্চায় পাতার সবুজ রঙের গাদকে আড়াই থেকে চার ঘণ্টা অক্সিডাইজেশন করতে হয়।

এই সময় সবুজ রঙের গাদ বাতাসের সঙ্গে বিক্রিয়ায় নীল রঙের গাদে পরিণত হয়। সেটি সাদা মার্কিন কাপড়ে ছেঁকে নেওয়া হয়। এরপর এই নীল গাদ রোদে শুকানো হয় অথবা জ্বাল দেওয়া হয়। এখান থেকে কেক ও গুঁড়া আকারে নীল পাওয়া যায়।

এই নীল তৈরিতে বিভিন্ন ধাপে সময়ের হেরফের হলে নীলের গুণগত মানের তারতম্য ঘটে। নীলগাছের আড়াই শ কেজি সবুজ পাতা থেকে এক কেজি নীল পাওয়া যায়।

ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার শাহ মো. আবদুল জব্বার দীর্ঘদিন ধরে নীল ও প্রাকৃতিক রং নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আশির দশকের শেষ দিকে ভেজিটেবল ডাই সোসাইটি নামের একটি সংগঠন রাজধানীর বোটানিক্যাল গার্ডেনে এক বিঘা জমি ইজারা নিয়ে নীল চাষ শুরু করেছিল। কিন্তু উৎপাদনে যায়নি। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) নব্বইয়ের দশক থেকে নীল চাষের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে, পাশাপাশি নীল চাষও।

যখন হাতে কোনো কাজ থাকে না, তখন নীল চাষের এ টাকাটাই অনেক কাজে লাগে।
বিধান রায়, কৃষক

আবদুল জব্বার বলেন, পরে এমসিসি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে রংপুরের হস্ত কুটিরশিল্প প্রশিক্ষণ ও কল্যাণকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায় নীল চাষ শুরু করেন। নিখিল চন্দ্র রায়ের উৎপাদিত নীল বর্তমানে ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশের মাধ্যমে বাজারজাত করা হচ্ছে।

বেসরকারি সংগঠন কেয়ার বাংলাদেশের একটি সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ হচ্ছে লিভিং ব্লু প্রাইভেট লিমিটেড। লিভিং ব্লু হিসেবে প্রতিষ্ঠানের নামকরণের আগে ২০০৫ সালের দিকে নকশিকাঁথা তৈরির প্রকল্প ‘নিজেদের জন্য নিজেরা’র আওতায় নীল নিয়ে কাজ শুরু হয়। বর্তমানে নীলের রং ব্যবহার করে শিবরি নকশায় তৈরি কাঁথা, ওড়না বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

লিভিং ব্লু লিমিটেডের অধীনে রংপুরের মোট ৩০০ একর জমিতে নীল চাষ হচ্ছে। প্রায় ২০০০ কৃষক নিজের জমিতে বা জমি ইজারা নিয়ে নীল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে ১ টন নীল উৎপাদনে সংস্থাটির খরচ হয় ২২ লাখ টাকা। স্থানীয় বাজারে ৪ হাজার টাকা কিলো হিসাবে এই নীলের বাজারমূল্য ৪০ লাখ টাকা। রপ্তানি বাজারে বিভিন্ন খরচ বাদ দিয়ে নিট দাম প্রতি কেজিতে ৪ হাজার ৫৯০ টাকা। ৭টি দেশে নীল রপ্তানি হচ্ছে। দেশগুলো হলো ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও কানাডা।

বর্তমানে দেশে নীলের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য কোনো ল্যাব বা পরীক্ষাগার নেই। ভারত থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে সময় ও টাকা বেশি লাগছে। দেশে নীল উৎপাদন হচ্ছে, সে প্রচারটাও নেই।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রাকৃতিক নীলের ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে

প্রতিষ্ঠানটির টেকনিক্যাল কর্মকর্তা সৈয়দ মোর্তুজা জাহাঙ্গীর বলেন, ২০১৮ সালে ‘লিভিং ব্লু’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান স্টোনি ক্রিক কালারসের কাছে এক টন নীল রপ্তানি করেছিল। লিভিং ব্লুর মোট আয়ের ৪০ শতাংশই আসে নীল রপ্তানি থেকে। গত বছর জাপান, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে আড়াই শ কেজি এবং চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৭০ কেজির মতো রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে।

২০১৮ সালে রংপুরে বাণিজ্যিকভাবে নীল উৎপাদন শুরু করে ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ। বর্তমানে ২০ বিঘা জমিতে নীল চাষ করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বললেন, ২০১৮ সালে পৌনে ২০০ কেজি এবং ২০১৯ সালে আড়াই শ কেজির বেশি উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছরে উৎপাদন ৩০০ কেজি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সংস্থাটি এ পর্যন্ত লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে ২০০ কেজি নীল নমুনা হিসেবে পাঠিয়েছে। হঠাৎ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানি শুরু করতে পারেনি।

ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার শাহ মো. আবদুল জব্বার বললেন, এখন নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই বছরে লাগে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও প্রাকৃতিক নীলের ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে দেশে আনুমানিক নীলের চাহিদা এক টনে দাঁড়াবে।

আগামী পাঁচ বছরে দেশে আনুমানিক নীলের চাহিদা এক টনে দাঁড়াবে
শাহ মো. আবদুল জব্বার, ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার

সম্ভাবনা কতটুকু

রংপুরের পাগলাপীরে নিখিল চন্দ্র রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কাপড়ে মুড়িয়ে নীল শুকানো হচ্ছে। বাড়িতেই তিনি নীল উৎপাদন করেন। উঠানে কয়েকটি নীলগাছ লাগিয়ে রেখেছেন। তিনি নীলের পাতা থেকে কয়েল, তেল, চুলের কলপ, সবুজ সারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির চেষ্টা করেছেন। নিখিল রায় বলেন, নীলের গাছ থেকে আইসক্রিমের কাঠি তৈরি করা যায়। নীল তৈরির প্রক্রিয়ায় ছাঁকনির সময় ফেলে দেওয়া পানি লিকুইড ক্লিনার হিসেবেও বাজারে বিক্রি করা যায়। তবে সরকারি অনুমোদন ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।

বর্তমানে দেশে নীলের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য কোনো ল্যাব বা পরীক্ষাগার নেই। ভারত থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে সময় ও টাকা বেশি লাগছে। দেশে নীল উৎপাদন হচ্ছে, সে প্রচারটাও নেই। ফলে যাদের প্রয়োজন, তাদের অনেকে কৃত্রিম নীল কিনছে, অথবা ভারত থেকে বিভিন্নভাবে আমদানি করছে।

বর্তমানে অরণ্য ক্র্যাফট লিমিটেডের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মিশায়েল আজিজ আহমেদ লিভিং ব্লুতে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত নীল ১ নম্বর নীল হিসেবেই বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে। বিশ্বের খুব কম দেশই নীল উৎপাদন করছে। তাই সরকার চাইলেই বিশ্বের নীলের বাজারটা ধরতে পারে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন আরিফুল হক, রংপুর]