শেষে নিজস্ব অর্থায়নেই ৫ বছর ধরে হচ্ছে পাকা

কৃষকেরা জানান, বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও সড়কটি পাকাকরণে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে নলুয়ার হাওরে কৃষকের টাকায় শেরপুর-হরতাজপুর সড়ক পাকার কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওর। শুষ্ক মৌসুমে এখানে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে হয় ধান চাষ—দেশে খাদ্যের জোগানে যার অপরিসীম অবদান। কিন্তু ওই এলাকার কৃষকদের ধান তোলার কষ্ট লাঘবে কেউ এগিয়ে আসছে না। কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, জগন্নাথপুর পৌরসভার শেরপুর এলাকা থেকে হরতাজপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ধান তোলার সড়কটি পাকা করা হোক। এতে তাঁদের ধান তোলার কাজটি সহজ হবে।

কৃষকেরা জানান, বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও সড়কটি পাকাকরণে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বাধ্য হয়ে পাঁচ বছর আগে হাওরের কৃষকেরা নিজেরাই চাঁদা তুলে সড়কটি পাকাকরণের কাজ শুরু করেন। নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খেলেও কৃষকেরা তাতে দমে যাননি। প্রতিবছর অল্প অল্প করে সড়কটি পাক করার কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। ২০১৭ সালে সড়কে পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। সেই থেকে প্রতিবছর বর্ষা আসার আগে আগে পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। এই সড়কে ২০১৭ সালে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩০০ ফুট পাকাকরণ কাজ করা হয়।

২০১৮ সালে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে কৃষকেরা ৬০০ ফুট, ২০১৯ সালে সাড়ে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে ৭০০ ফুট এবং ২০২০ সালে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ কিলোমিটার কাজ করা হয়। চলতি বছর সাড়ে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০০ ফুট নির্মাণকাজ করা হবে। চলতি মৌসুমে সড়কের অবশিষ্ট অংশের পাকাকরণের কাজ শুরু হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার।

হাওর এলাকার ফসল রক্ষার জন্য ডুবন্ত সড়ক নির্মিত হলে পরিবেশের ভারসাম্যও ঠিক থাকবে, কৃষকেরাও উপকৃত হবেন।
শওকত ওসমান মজুমদার, কৃষি কর্মকর্তা, জগন্নাথপুর উপজেলা

উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুর রহমান বলেন, সড়কটি পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ থেকে শুরু হলেও সড়কের অধিকাংশ জায়গা কলকলিয়া ইউনিয়নের গড়গাঁও মৌজায় পড়েছে। এ সড়ক দিয়ে কমপক্ষে ছয় হাজার একর জমির বোরো ফসল ওঠে।

জগন্নাথপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছমির উদ্দিন বলেন, হাওরের ফসল ওঠার পর বর্ষাকালে ডুবে যাওয়া কৃষকের জমিতে মাছ ধরে যে আয় হয়, সে আয়ের টাকায় কৃষকেরা প্রতিবছর সড়কে অল্প অল্প করে পাকা করছেন।

পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর কৃষকনেতা লুৎফুর রহমান বলেন, ২০১৯ সালে তৎকালীন জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী সড়কটির কাজ পরিদর্শন করে সড়কের বাকি অংশ পাকাকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়িত হয়নি।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার জগন্নাথপুর উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কটি পৌরসভার অংশে রয়েছে। তাই আমরা কাজ করতে পারছি না।’ জগন্নাথপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আক্তার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, হাওর এলাকার ফসল রক্ষার জন্য ডুবন্ত সড়ক নির্মিত হলে পরিবেশের ভারসাম্যও ঠিক থাকবে, কৃষকেরাও উপকৃত হবেন।