‘পাহাড়ের গোরত হামার বাড়ি বাপু। এইঠে জারখান খুবে বেশি। রাইতের শীল শীল বাতাসখানোত হাত-পাওগুলা কোঁকড়া হয় আসেছে। এত্ত জারোত তোমার কম্বল পায়া খুব উপকার হইল।’ প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার ভজনপুর এলাকার ফজিরন নেছা (৬২)।
আজ বুধবার উত্তরের হিমেল বাতাস বয়ে যাওয়া শীতের সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভজনপুর ইউনিয়নের ভজনপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন শতাধিক নারী-পুরুষ। শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল নিয়ে সেখানে হাজির হন পঞ্চগড়ের প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ওই এলাকার ১৩০ জন দুস্থ-শীতার্ত মানুষের বাড়িতে গিয়ে কম্বল বিতরণের স্লিপ তুলে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্লিপধারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয় স্কুলমাঠে। উপস্থিত সবাইকে পরিয়ে দেওয়া হয় মাস্ক। এরপর প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে কম্বল।
কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জাকির হোসেন, প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান, পঞ্চগড় বন্ধুসভার সভাপতি রাশিদ আল শিহাব চৌধুরীসহ প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
মুই মানুষের কাছোত হাত পাতিয়া খাউ। জারের কাপড় কিনার টাকাপয়সা নাই। এই কম্বলডা পায়া কনকনা জারখানোত খুব উপকার হইল। তোমহার তানে দুয়া করিম বাপু।সূর্যমনি, ভজনপুর এলাকার প্রতিবন্ধী নারী
পরে দুপুরে তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের দর্জিপাড়ায় তালিমুল কোরআন নুরানীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার এতিম শিশুসহ হেফজখানার মোট ৭০ জন আবাসিক শিশুশিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে কম্বল। এ সময় তেঁতুলিয়া উপজেলার সহাকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুল হক, মাদ্রাসার সভাপতি আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক কুরবান আলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
এভাবেই বুধবার দিনভর প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া ২০০টি কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। ভজনপুর এলাকার প্রতিবন্ধী নারী সূর্যমনি ওরফে বুথিয়া (৬০) বলেন, ‘মুই মানুষের কাছোত হাত পাতিয়া খাউ। জারের কাপড় কিনার টাকাপয়সা নাই। এই কম্বলডা পায়া কনকনা জারখানোত খুব উপকার হইল। তোমহার তানে দুয়া করিম বাপু।’
দর্জিপাড়া তালিমুল কোরআন নুরানীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক কুরবান আলী বলেন, ‘আমরা খুব কষ্ট করে এই হাফেজিয়া মাদ্রাসাটি চালাই। এখানে এতিম শিশুদের পাশাপাশি আবাসিক ছাত্র হিসেবে ৭০ জন ছাত্রছাত্রী হাফেজি পড়ে। দেশের সবচেয়ে বেশি শীত তেঁতুলিয়ায় হওয়ায় শিশুরা খুব কষ্ট করে রাত যাপন করে। প্রথম আলোর কম্বল আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এভাবে এই শীতার্ত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।’