শীত এলেই বালু আর মাটি কাটার ধুম পড়ে। প্রশাসন পরিবেশবিরোধী কাজের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কোথাও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন হচ্ছে। কোথাও নদীর বাঁধের ভেতরের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার কোথাও নদীর বাঁধ ও সড়ক কেটে পাইপ দিয়ে বালু ফেলে জলাশয় ভরাটের তোড়জোড় চলছে।
শীত এলে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চলে কুমিল্লার গোমতী নদী ঘিরে। এ অবস্থায় পানির স্তর মাপার স্থান ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ধসে পড়ার উপক্রম হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে ভাঙন। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে বালু ও মাটিখেকো চক্র নদীটি ধ্বংস করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গোমতী নদী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন রাজনীতিকেরা। প্রশাসনের কর্মকর্তা নদী রক্ষায় কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছেন না। প্রশাসন চাইলে একটি ট্রাক্টরও বাঁধ কেটে নামতে পারবে না। অবৈধভাবে ইজারা ছাড়া বালু উত্তোলন করতে পারবে না। কেবল মাটি ও বালু বিক্রি নয়, মানুষের ফসলি জমি, নদীর পাড়ের গাছগাছালি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। এতে নদীর গতিপথের পরিবর্তন হচ্ছ
বেলচা দিয়ে নদী থেকে বালু তোলার কথা। কিন্তু ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। প্রতিবার নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এসব বেশি চলে।বুড়বুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা, বুড়িচং উপজেলা
পাউবো কুমিল্লা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার আদর্শ সদর উপজেলার কটকবাজার থেকে দাউদকান্দি উপজেলার কলাতিয়া পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই নদী। এর মধ্যে শহরের গা ঘেঁষে রয়েছে সাড়ে চার কিলোমিটার, শহরের ভেতরে রয়েছে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারসহ মোট ১০ কিলোমিটার। নদীর উভয় তীরে ১৩৫ কিলোমিটার শহররক্ষা বাঁধ অঅছে। নব্বইয়ের দশক থেকে নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু হয়।
সম্প্রতি গোমতী নদীর টিক্কারচর সেতুর পূর্ব অংশে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর পাড়ের মানুষের কৃষিজমি কেটে নদীতে মাটি ফেলা হচ্ছে। এরপর ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি মিশ্রিত পানি অন্যত্র ফেলা হচ্ছে। এই অংশে অসংখ্য ড্রেজার মেশিন রয়েছে। নদীর উত্তর পাড়ে বাঁধ কেটে ট্রাক্টর মাটি নিয়ে ওঠানামা করছে। এর পাশেই পানির স্তর মাপার স্থান। এখানে একটি গেজ মেশিন রয়েছে। ওই মেশিনের পাশের মাটিও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ির সামনে নদীর বাঁধ ধ্বংস করে মাটি কাটা হচ্ছে। দুর্গাপুর, আড়াইওড়া, আমতলি এলাকায় মাটি কাটার কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে আছে। খুঁটির চারপাশের মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। পালপাড়া, গোবিন্দপুর এলাকায় একই অবস্থা।
গত অক্টোবর মাসে আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ডুমুরিয়া-চাঁনপুর এবং কুমিল্লা শহরতলি এলাকার শুভপুর শেখ কামাল ক্রীড়া পল্লি এলাকা দিয়ে ওই বাঁধ কেটে জলাশয় ভরাট করছে একটি অসাধু চক্র। এরপর বাঁধের ওপরের পাকা সড়ক দিয়ে পাইপ টানা হয়। ওই পাইপে করে নদী থেকে বালু নিয়ে সাড়ে পাঁচ একর ভাবনা দিঘি ভরাটের পাশাপাশি শুভপুর-চাঁনপুর জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে।
প্রশাসন যখনই অভিযোগ পেয়েছে, তখনই ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাঁরা জরিমানা ও ড্রেজার মেশিন জব্দ করেছেন। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।মো. আবুল ফজল মীর, জেলা প্রশাসক
নদীর পাড়ের বাসিন্দা ও বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, বেলচা দিয়ে নদী থেকে বালু তোলার কথা। কিন্তু ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। প্রতিবার নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এসব বেশি চলে। কাপ্তান বাজার এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. মনসুর বলেন, শীত এলেই বালু আর মাটি কাটার ধুম পড়ে। প্রশাসন পরিবেশবিরোধী কাজের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কুমিল্লা পাউবোর পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি একা কী করব? আমার তো ম্যাজিস্ট্রেট নেই। আমি কোনো ঘটনা ঘটলে মামলা করি।’
পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, বাঁধের ওপরের সড়কের পাশে পরিবেশ অধিদপ্তর সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড আছে। সেখানে সাজার কথা লেখা আছে। তাঁরা পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা করছেন।
জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, প্রশাসন যখনই অভিযোগ পেয়েছে, তখনই ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাঁরা জরিমানা ও ড্রেজার মেশিন জব্দ করেছেন। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।