আইসিডিডিআরবির চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় শিশুরা রোটা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে

এবার শীতের শুরু থেকেই চাঁদপুর ও আশপাশের জেলাগুলোয় শিশুরা রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়া পরিস্থিতি, এর চিকিৎসা এবং আক্রান্ত রোগী বা তাদের স্বজনদের জন্য করণীয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মতলব হাসপাতাল প্রধান চিকিৎসক আল ফজল খানের সঙ্গে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মতলব হাসপাতাল প্রধান চিকিৎসক আল ফজল খান
ছবি : সংগৃহীত
প্রশ্ন

প্রথম আলো: রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া কি শুধু শীতকালেই হয়ে থাকে? শিশুরা এ বছর এত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে কেন?

আল ফজল খান: রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া সারা বছরই হয়ে থাকে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শীতের সময়ে এর প্রকোপ বেশি থাকে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এ বছর শীতের শুরু থেকে শিশুরা ব্যাপক হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এ রোগের লক্ষণগুলো কী কী?

আল ফজল খান: শিশুদের ঘন ঘন পাতলা পায়খানার সঙ্গে বমি ও জ্বর থাকতে পারে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: রোটা ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা কী?

আল ফজল খান: আক্রান্ত শিশুকে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ এবং ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে প্রতিদিন একটি করে মোট ১০ দিন বেবি জিংক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। এখানে একটি কথা বলা জরুরি যে খাবার স্যালাইনের পুরো প্যাকেট অবশ্যই আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অল্প অল্প করে স্যালাইন গুলানো যাবে না। তাতে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে মারাত্মক জটিলতা তৈরি হতে পারে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এ রোগে আক্রান্ত রোগীকে কখন হাসপাতালে আনতে হবে?

আল ফজল খান: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। সাধারণত সঠিক পরিচর্যায় আক্রান্ত শিশু পাঁচ থেকে সাত দিনে আরোগ্য লাভ করে থাকে। তবে পানিস্বল্পতার লক্ষণগুলো যেমন—শিশুর একদম নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, শিশুর চোখ দেবে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, বুকের দুধ টেনে খেতে না পারা, ঘণ্টায় তিনবার বা তার বেশিবার বমি হওয়া, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া ও খিঁচুনি হলে দেরি না করে শিশুকে কাছের সরকারি হাসপাতালে নিতে হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এ রোগ প্রতিরোধে কী করণীয়?

আল ফজল খান: এ রোগের ঝুঁকি এড়াতে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। পায়খানার পর, শিশুর খাবার তৈরি ও শিশুকে খাওয়ানোর আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাও জরুরি। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ছয় মাস বয়সের পর শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে শীতে শিশুকে গরম পোশাক পরাতে হবে। সম্ভব হলে শিশুকে দুই ডোজ রোটা ভাইরাসের টিকা দিতে হবে।