নারায়ণগঞ্জ বন্দরের সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে সরু শীতলক্ষ্যা নদীতে একসঙ্গে ৮ থেকে ১০টি বাল্কহেড সারিবদ্ধভাবে চলে। মাসে ৪-৫টি দুর্ঘটনা ঘটে।
নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে বেপরোয়া গতিতে তিন-চার সারিতে বাল্কহেড (বালু বহনকারী বড় ট্রলার) চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে। আতঙ্কে থাকেন ইঞ্জিনচালিত সাধারণ ট্রলার ও নৌকার মাঝি-যাত্রীরা। বাল্কহেডের চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে নৌ পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি তাঁদের।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বন্দর সেন্ট্রাল ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীসহ খেয়া পারাপারের ট্রলার ও নৌকা চলতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরপরই ঘাট থেকে ট্রলার ও নৌকা ছেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দ্রুত গতিতে চলছে বাল্কহেড। মাঝেমধ্যে দেখা যায় ট্রলার ও নৌকার খুব কাছাকাছি দিয়ে দ্রুত গতিতে চলছিল বাল্কহেড। বিকেলের পর থেকে নদীতে বাল্কহেড চলাচলের সংখ্যাও বেড়ে যায়। একসঙ্গে তখন ৮ থেকে ১০টি বাল্কহেড সারিবদ্ধভাবে চলে।
৫ মার্চ বিকেলে বন্দর সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে বাল্কহেডের ধাক্কায় দুটি নৌকা ডুবে যায়। যাত্রীরা তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ থাকে কলেজছাত্রী রহিমা আক্তার। দুই দিন পর তাঁর লাশ উদ্ধার হয়েছে। নৌ-পুলিশ অভিযুক্ত চালকসহ বাল্কহেডটি আটক করে।
এর আগে সম্প্রতি নবীগঞ্জে বেপরোয়া বাল্কহেড একটি যানবাহন পারাপারের ফেরিতে গিয়ে ধাক্কা দেয়। এতে প্রাণহানি না ঘটলেও ফেরির ক্ষতি হয়।
দুর্ঘটনার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পুলিশের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও স্থানীয় মাঝি ও লোকজন জানিয়েছেন, বাল্কহেডের ধাক্কায় মাসে চার থেকে পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটে।
১৫ বছর ধরে সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে ভাড়ায় বইঠা নৌকা চালান স্বদেব সাহা। তাঁর বাড়ি সোনারগাঁয়ের মেঘনায়। স্বদেব বলেন, সিগন্যাল বাতি ও হর্ন ব্যবহার করে না বাল্কহেডগুলো। বেপরোয়া গতিতে একসঙ্গে কয়েকটি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
নবীগঞ্জ এলাকার জোয়াত আলীও বইঠার নৌকা চালান ৪০ বছর ধরে। তিনি বলেন, বেপরোয়া বাল্কহেড চলাচলের কারণে আতঙ্ক নিয়ে নৌকা চালান তিনি। নিজের জীবনের সঙ্গে যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
একটি নৌকার যাত্রী আবু হেনা বলেন, ‘জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে খেয়া পারাপার হই। কখন যে বাল্কহেড বা কার্গো ট্রলার এসে নৌকায় লাগিয়ে ডুবিয়ে দেয়, সেই ভয়ে থাকি।’
সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে লক্ষাধিক যাত্রী পারাপার হন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক। খেয়াঘাটে ২০০ নৌকা চলাচল করে। জনপ্রতি ভাড়া ৫ টাকা। এ ছাড়া ইঞ্জিনচালিত ট্রলার আছে ১২টি। জনপ্রতি ভাড়া ২ টাকা।
এই ঘাটে নিয়মিত নৌকা ও ট্রলার চালান এমন ব্যক্তিরা বলেছেন, শীতলক্ষ্যা দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ বাল্কহেড চলাচল করে। বালুমহাল থেকে বাল্কহেডগুলো বালু নিয়ে রূপগঞ্জ, পূর্বাচলের বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি ও বালুর গদিঘরে সরবরাহ করে।
ঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যস্ততম এ খেয়াঘাটে নদী এমনিতেই সরু। কয়েকটি বাল্কহেড একসঙ্গে পুরো নদী দখল করে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় দুর্ঘটনা ঘটছে।
বাংলাদেশ বাল্কহেড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন বলেন, চালকদের শৃঙ্খলা ও সচেতনতার সঙ্গে চালানোর নির্দেশ দেন তাঁরা। এরপরও অসাবধানতায় দুর্ঘটনা ঘটালে এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বাল্কহেডের মালিককেই বহন করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, সন্ধ্যার পর বাল্কহেড চলাচল বন্ধ। দিনের বেলায় একসঙ্গে অনেকগুলো বাল্কহেড যাতে চলতে না পারে, সে জন্য নৌ পুলিশ তদারকি করে।