ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডের সব কটি জানালার কাচ ভাঙা। আলো নেই। পাখা ঘুরছে না। মেঝে স্যাঁতসেঁতে। শয্যাগুলো চাদরবিহীন। রোগী পাঁচজন। তাদের কেউ ডায়রিয়া, কেউ নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের শয্যাসংখ্যা ২০। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর জন্য পাঁচ শয্যার পৃথক একটি কক্ষ রয়েছে। সব সময় শয্যা পূর্ণ থাকে। বাড়তি চাপ মোকাবিলায় মেঝেতেও শয্যার ব্যবস্থা রাখা আছে। সম্প্রতি রোগীর চাপ থাকলেও ভর্তি করে সন্তানের চিকিৎসা নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন অভিভাবকেরা।
দেড় বছর বয়সী সুমাইয়া। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন দিন ধরে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। সুমাইয়ার পাশে সার্বক্ষণিক থাকছেন তার মা বিথি বেগম। শিশু ওয়ার্ডের এই বেহাল দেখে বিথি হতাশ। তিনি বলেন, সারা দিনেও বিদ্যুৎ থাকে না। কিছু সময়ের জন্য এলেও আবার চলে যায়। খোলা জানালা দিয়ে ধুলাবালু ভেতরে আসে। এ অবস্থায় নিউমোনিয়া রোগীদের সমস্যা বেশি। বিথি পৌর শহরের পঞ্চবটি এলাকার বাসিন্দা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার। ভৈরব ছাড়াও লাগোয়া উপজেলা কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, নরসিংদীর বেলাব ও রায়পুরা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার একাংশের মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে এই হাসপাতালে আসে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নেয়। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই শতাধিক।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড পরিচালনায় একজন বিভাগীয় কনসালট্যান্ট চিকিৎসক ও জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স রাখা আছে। কনসালট্যান্ট দিদারুল ইসলাম এক সপ্তাহ আগে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় ছুটিতে আছেন। এ কারণে শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসাব্যবস্থা জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স সবিতা রানী রায়নির্ভর হয়ে পড়েছে।
সূত্রটি জানায়, হাসপাতালের ১০০ শয্যা উন্নীতকরণের অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে। এ কারণে পরিবেশের স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। একই কারণে বিদ্যুৎ–বিভ্রাটও ঘটছে।
সবিতা রানী রায় বলেন, সরকারি সেবা পেতে প্রতিদিন ভর্তিযোগ্য রোগী আসছে ঠিকই, কিন্তু সবকিছু দেখার পর আর থাকতে চায় না। যেসব অভিভাবক সন্তানকে ভর্তি করান, তাঁদের অনেকে চিকিৎসা শেষ না করেই ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। কয়েক দিন আগেও শয্যা পূর্ণ ছিল। বিশেষ করে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া এবং বিদ্যুৎ–বিভ্রাট প্রকট আকার ধারণ করায় অভিভাবকেরা শিশু ওয়ার্ড–বিমুখ হয়ে পড়েছে।
সবিতা রানী জানান, চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগে গত দুই দিনে ১০ থেকে ১৫ জনকে ছাড়পত্র দিতে হয়েছে। তাদের অনেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।
গত সোমবার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডটির অবস্থান সম্প্রসারিত ভবনের তৃতীয় তলায়। বর্তমানে ওই ভবনে নির্মাণকাজ চলছে। প্রবেশমুখে নির্মাণসামগ্রী রাখা। ছাদ চুয়ে ওয়ার্ডের ভেতরে পানি পড়ছে। দেয়ালের রং উঠে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। কাচ না থাকায় রোদ আটকাতে জানালায় প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
বেগম আক্তার তাঁর ৯ মাস বয়সী মেয়ে তানিশাকে নিয়ে ওয়ার্ডে আছেন দুই দিন ধরে। তানিশা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। বেগম আক্তার বলেন, দুই দিনেও চিকিৎসকের দেখা পেলেন না। বেগম আক্তার উপজেলার শম্ভুপুর এলাকার বাসিন্দা।
একই এলাকার আশা বেগমের ছয় মাস বয়সী মেয়ে সানাম বেগমের সমস্যা পাতলা পায়খানা। আশা বলেন, হাসপাতালে সেবা বলতে ভর্তি করানো পর্যন্ত। এরপর বাকি সবটুকু দুর্ভোগ।
এসব বিষয়ে হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, সমস্যা হয়েছে বিভাগীয় চিকিৎসকের দুর্ঘটনাজনিত কারণে ছুটিতে থাকা। বিদ্যুৎ সমস্যা সাময়িক। নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলে থাকবে না।