শরীয়তপুরে এক সপ্তাহ ধরে ঠান্ডাজনিত রোগ ও ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বেড়েছে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে অনেক শিশু রোগী ও তাদের স্বজনেরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। অনেক শিশুকে মেঝেয় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা-শরীয়তপুর মহাসড়কের পাশে ছয় একর জমির ওপর ১৯৮৫ সালে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি চালু হয়। ২০০৩ সালে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তখন থেকে হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে ১০ শয্যার শিশু ওয়ার্ড চালু করা হয়। হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞের দুটি পদ রয়েছে। এর মধ্যে একটি পদ শূন্য রয়েছে। বর্তমানে একজন চিকিৎসক বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত শনি থেকে গতকাল বুধবার বহির্বিভাগে অন্তত দুই হাজার শিশু (প্রতিদিন গড়ে ৪০০ শিশু) চিকিৎসাসেবা নিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ শিশু চিকিৎসা নিয়েছিল। আর গতকাল ১০টি শয্যার বিপরীতে শিশু রোগী ভর্তি ছিল ৩০ জন। অনেক শিশুকে মেঝেতে রাখা হয়েছে।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থান করে দেখা যায় শিশু ওয়ার্ডে রোগীর স্বজনদের ভিড়। অনেক শিশুকে নিয়ে তাদের স্বজনেরা মেঝেতে অবস্থান করছেন। অনেকে শয্যা না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আর বহির্বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনে অন্তত দুই শতাধিক স্বজন শিশুদের কোলে করে অবস্থান করছেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার নাজিমপুর গ্রামের গৃহবধূ সালেহা বেগম দেড় বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তিন দিন ধরে শিশুটির জ্বর ও পাতলা পায়খানা। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেও সুস্থ হয়নি। তাই তিনি মেয়েকে নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে ছুটে এসেছেন।
সালেহা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল নয়টায় হাসপাতালে এসেছি। দুপুর ১২টা বাজে, এখনো চিকিৎসকের কক্ষ থেকে নাম ডাকা হয়নি। আল্লাহই জানেন, কত সময় অপেক্ষা করতে হয়। আমার মতো শত শত মা তাঁদের শিশুদের নিয়ে অপেক্ষা করছেন।’
নড়িয়া উপজেলার দুলুখণ্ড গ্রামের মোবারক হোসেন সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন গত রোববার। তিনি সন্তানের জন্য কোনো শয্যা পাননি। বাধ্য হয়েই মেঝেতে রাখতে হচ্ছে। তাঁর স্ত্রী সন্তান কোলে করে বসে আছেন।
মোবারক হোসেন বলেন, ‘ভালো চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তারও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। আর শয্যা তো পাইনি। এভাবে একটি জেলার বড় হাসপাতাল চলতে পারে? ন্যূনতম চিকিৎসাসেবাও পাওয়া যাচ্ছে না।’
জানতে চাইলে হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। অভিভাবকেরা একটি সচেতন থাকলেই অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব। শিশুদের ঘামতে দেওয়া যাবে না। প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করাতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শিশুদের রাখতে হবে। সাত দিন ধরে শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে। সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ মোস্তফা খোকন বলেন, ‘অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে চলতে হচ্ছে। চিকিৎসকের সংকটের পাশাপাশি শয্যার সংকট তো রয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করি সর্বোচ্চ সেবা দিতে। শয্যা কম থাকায় কিছু সময়ের জন্য রোগীদের মেঝেতে রাখতে হয়। শয্যা খালি হলে তাদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়।’