ঠাকুরগাঁও জেলা সবজি চাষের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। এ ছাড়া এখানে এখন লিচু ও আমের বাগান গড়ে উঠেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় দুই দফা শিলাবৃষ্টি হানা দিয়েছে। এতে মাঠের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আম ও লিচুর মুকুলের। কৃষিতে শিলাবৃষ্টি প্রভাব নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) মো. আবু হোসেনের সঙ্গে।
প্রথম আলো: শিলাবৃষ্টির কারণ কী?
আবু হোসেন: প্রচণ্ড গরমে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে আমাদের আশপাশের বাতাস অস্থির হয়ে ওঠে। তখন গরম বাতাস হালকা হয়ে খুব দ্রুত ওপরে উঠতে থাকে। আশপাশের অপেক্ষাকৃত ভারী বাতাস ছুটে আসে শূন্যস্থান পূরণের জন্য। ওদিকে হালকা যে বাতাসটা ওপরে উঠছে, সেখানে প্রচুর ধূলিকণা থাকে। এ সবকিছু মিলিয়েই ঊর্ধ্বাকাশে ঠান্ডা পরিবেশে শিলা তৈরি হয়। যেখানে ঊর্ধ্বমুখী বাতাসের চাপ কম থাকে, সেখানে অভিকর্ষের প্রভাবে শিলা নিচে নামতে শুরু করে। মেঘের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আরও জলীয় বাষ্প নিয়ে আকারে আরও বড় হতে থাকে। এভাবে কয়েকবার বাতাসের চাপের তারতম্যের জন্য শিলাগুলো ওঠানামা করে। ঠিক যখন বাতাসের চাপের চেয়ে শিলাগুলো বেশি ভারী হয়ে যায়, তখন মাটিতে পড়তে থাকে। আর আমরা এটাকে বলি শিলাবৃষ্টি।
প্রথম আলো: সাধারণত কখন শিলাবৃষ্টি হয়?
আবু হোসেন: সাধারণত গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমের সময় শিলাবৃষ্টি হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ফাগুন-চৈত্র মাসেই শিলাবৃষ্টির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মের আগেই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকেই এর কারণ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।
প্রথম আলো: শিলাবৃষ্টি কৃষিতে কেমন প্রভাব ফেলে?
আবু হোসেন: শিলাবৃষ্টির সময় গড়ে একটা শিলার ব্যাস হয় ৫ থেকে ১৫০ মিলিমিটারের মধ্যে। তবে বড় ব্যাসের শিলা হলে শিলার মাধ্যমে ফসলের ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে যায়। এখন মাঠে গম, ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ ও শীতকালীন নানা শাকসবজি রয়েছে। পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন শাকসবজিও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এ সময় আম-লিচুর মুকুল বের হওয়ার সময়। শিলাবৃষ্টির কারণে ফসলের পাশাপাশি আম-লিচুর মুকুলেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে।
প্রথম আলো: চলতি মাসে এলাকায় দুই দফা শিলাবৃষ্টি হলো। এতে কৃষির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে?
আবু হোসেন: শিলাবৃষ্টির কারণে মাঠের ফসলের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণের কাজ চলছে। কাজটা শেষ হলে ক্ষতির পরিমাণটা জানতে পারব। তবে যেসব আম-লিচুর বাগানে মুকুল এসেছে, শিলার আঘাতে সেসব মুকুল ঝরে পড়েছে। সেই ক্ষতিটা এখনো জানা যায়নি।
প্রথম আলো: কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কোনো প্রণোদনার উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তা আছে?
আবু হোসেন: ফসলের তিন মৌসুমে ফসলের ক্ষতি হলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা, পুনর্বাসনসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবারের শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হবে। কৃষি বিভাগ যেকোনো দুর্যোগকালে কৃষকের পাশে ছিল, এবারও থাকবে।