স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানির ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই আজ মঙ্গলবার মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে স্পিডবোট ছাড়ছে। যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে মাদারীপুরের বাংলাবাজারের অদূরে চরের মধ্যে। গতকাল সোমবার মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজারে বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে ওই প্রাণহানি ঘটে।
আজ বাংলাবাজার ঘাটে নৌ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর কোনো নজরদারি দেখা যায়নি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই ঘাটে কাউকেই পাওয়া যায়নি। এ সময়ের মধ্যে এই ঘাট থেকে কোনো স্পিডবোট ছেড়ে যায়নি। যাত্রীরা ফেরি ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় (ট্রলার) যাতায়াত করছেন। তবে পাঁচ ঘণ্টা সময়ে তিনটি স্পিডবোট ঘাটের অদূরে চরের মধ্যে যাত্রী নামিয়ে দিতে দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই স্পিডবোট তিনটি শিমুলিয়া প্রান্ত থেকে ছেড়ে এসেছে।
তবে নৌপুলিশ বলছে, যে কয়েকটি কয়েক স্পিডবোট চলেছে সেগুলো পদ্মা সেতুর কাজে নিয়োজিত। কোন স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার হয়নি।
নৌপুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল্লাহ আরেফ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাবাজার ঘাটে নৌপুলিশের তৎপরতা আছে। গতকালের দুর্ঘটনায় করা মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও লাশ হস্তান্তর–পরবর্তী কার্যক্রমে নৌপুলিশের সদস্যরা ব্যস্ত আছেন। এ কারণে তাঁরা সব সময় ঘাটে থাকতে পারছেন না। এ ছাড়া বাংলাবাজার ঘাট থেকে কোনো অবৈধ নৌযান চলাচল করছে না। শিমুলিয়া ঘাট থেকে কীভাবে স্পিডবোটসহ অবৈধ নৌযান ছেড়ে আসছে, তা তিনি বলতে পারছেন না।
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া, মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও শরীয়তপুরের মাঝির ঘাট নৌপথে লঞ্চ ও ফেরির সঙ্গে যাত্রী পরিবহন করছে স্পিডবোট ও ট্রলার। এই তিনটি ঘাটে অন্তত ৪৫০টি স্পিডবোট ও ২০০টি ট্রলার চলাচল করে। স্পিডবোটে ৩০ থেকে ৩৫ জন এবং ট্রলারে ৮০ থেকে ১০০ জন যাত্রী বহন করা হয়। স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচলে কোনো সরকারি অনুমতি নেই। তবে সব পক্ষের সমঝোতায় চলে এসব নৌযান।
নৌ নিরাপত্তা ও অবৈধ নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করার কথা নৌপুলিশ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ, কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসনের। কিন্তু তিনটি সংস্থার কোনো দলই আজ বাংলাবাজার ঘাটে ছিল না।
শিবচরের চর জানাজাত নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, গতকালের দুর্ঘটনায় চালক, দুজন মালিক ও ঘাট ইজারাদারকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ওই কাজে ব্যস্ত থাকায় ঘাটে যাওয়া সম্ভব হয়নি তাদের। তা ছাড়া এই ফাঁড়িতে আটজনের জনবল রয়েছে। নদীতে দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো নৌযান নেই। তাই তীরে হেঁটেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। তাঁরা ফেরি ও ট্রলারে করে যাতায়াত করছেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গার গৃহবধূ শিমলা আক্তার ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরছেন। সঙ্গে চার শিশুসন্তান। তিনি শিমুলিয়া থেকে ট্রলারে করে বাংলাবাজার ঘাটে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকি। গ্রামে ঈদ করব।
লকডাউনের কারণে আগেভাগেই চলে এসেছি। লঞ্চ ও স্পিডবোট চলছে না। তাই ট্রলারে করে পদ্মা নদী পার হয়েছি।’
কাঁঠালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মোতাহার শেখের চা ও পানের দোকান বাংলাবাজার ফেরিঘাটে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিসের লকডাউন চলছে আর গণপরিবহন বন্ধ? রাতের আঁধারে তো সব চলে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ও ভোররাতেও স্পিডবোট চলেছে। ঘাট ছাইড়া দূরে চরের মধ্যে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া হয়। অগো নিয়ন্ত্রণ করব কীভাবে?’
বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার ঘাটের পরিদর্শক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ) আক্তার হোসেনকে বাংলাবাজার ঘাটে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘এখন লকডাউন চলছে। তাই সব বন্ধ। সরকারি নির্দেশনায় আমরাও ঘাটে নেই। সবকিছু চলাচল করলে ঘাটে থাকব।’ এত বড় দুর্ঘটনার পর কেন তাঁরা ঘাটের নজরদারিতে নেই—এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশেই আমরা লকডাউনে দায়িত্ব পালন করছি না। এখন নৌপুলিশ আছে, তারাই দায়িত্ব পালন করবে।’
মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সিরাজুল কবির বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে এবং বিকেলে তাঁরা দুটি স্পিডবোট আটক করেছেন। এগুলো পদ্মা সেতুর কাজে নিয়োজিত ছিল। এ কারণে আবার তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার শিমুলিয়া ঘাট বা এর আশপাশ থেকে কোনো যাত্রীবাহী স্পিডবোট যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়নি।
জানতে চাইলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। সঙ্গে জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ তাঁরা কেন সেখানে ছিলেন না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।