এক যুগ আগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা বাজারে হাফিজুর রহমান নামের শিবিরের এক কর্মীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলায় তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ ৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলায় আরও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার নিহত হাফিজুরের ভগ্নিপতি সলেমান সরদার বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর আমলি প্রথম আদালতে মামলার আবেদন করেন। শুনানি শেষে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন কুমার বড়াল আবেদন এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী অমিত কুমার রায় বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাতক্ষীরার তৎকালীন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক, ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, সমাজের আলো ডটকমের সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন, দৈনিক পত্রদূতের সাংবাদিক মনি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এস এম শওকত হোসেন, জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল লতিফ, অতিরিক্ত পিপি ওকালত হোসেন। মামলার ১ থেকে ১১ নম্বর আসামি পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা।
মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, সদর উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের লোকদান দফাদারের ছেলে হাফিজুর রহমান (২২) একজন শিবির কর্মী। ২০১৩ সালে ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর তিন দিন হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ডাক দেয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এতে আওয়ামী লীগের গাত্রদাহ শুরু হয়। ২২ ডিসেম্বর মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতারা গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকে পুলিশসহ অন্য আসামিরা হরতাল ও অবরোধ যাতে সফল না হয়, সে জন্য যা প্রয়োজন, তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। ২৪ ডিসেম্বর সকাল সাতটা থেকে সাতক্ষীরা-নাভারণ সড়কের ঝাউডাঙা বাজারে জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা পিকেটিং করার সময় দুই দিক থেকে আসামিরা সেখানে যান। তাঁরা পিকেটারদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ধাওয়া করলে পিকেটাররা পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাঁর শ্যালক হাফিজুর রহমানকে কয়েকজন ধরে ফেলেন। তাঁরা তাঁকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশ হাফিজুরকে ঝাউডাঙা বাজারে এনে নাকের মধ্যে গুলি করে। গুলি মাথার খুলি ভেঙে বেরিয়ে যায়। পরে পুলিশের পিকআপে লাশ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় এখন মামলার আবেদন করছেন।