টানা চার দিন ধরে প্রবাসী–অধ্যুষিত মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা অবরুদ্ধ করে রেখেছে প্রশাসন। উপজেলার রাস্তাঘাট, হাট-বাজার এখন প্রায় জনশূন্য। লোকজন খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
দেশে করোনায় আক্রান্ত ২৭ জনের মধ্যে মাদারীপুরের শিবচরে রয়েছেন ৯ জন। তাই শিবচর উপজেলায় করোনার সংক্রমণ রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত আটটা থেকে শিবচরের হাট-বাজারগুলোয় মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রশাসন। এরপর থেকে মানুষের আনাগোনা ক্রমশ কমতে থাকে।
উপজেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, শিবচর পৌর এলাকার ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড, বহেরাতলা ইউনিয়নের দুটি গ্রাম, পাঁচ্চর ইউনিয়নের দুটি গ্রাম ও বাঁশকান্দি ইউনিয়নের এটি গ্রামের মোট ৭৮ হাজার মানুষ নিজ এলাকার বাইরে বের হতে পারছে না। ওই ছয় এলাকাই কন্টেইনমেন্ট (নিয়ন্ত্রিত এলাকা) ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকার বাজারে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের হাতে গোনা দু–একটি দোকান ও ওষুধের দোকান খোলা রয়েছে। শুধু প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এলাকার মানুষ বাজারে যেতে পারছে। কেনাকাটা শেষে তাৎক্ষণিক বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
এসব এলাকার দুজন দোকানি মুঠোফোনে বলেন, ‘দোকান খোলা রাখলেও ক্রেতা তেমন নেই। সারা দিনে ১০ জন ক্রেতাও দোকানে আসেন না। তাই আমরা দিনের বেশির ভাগ সময় দোকান বন্ধ রাখি। কারও কিছু প্রয়োজন হলে ফোন করলে দোকানে এসে মালামাল বুঝিয়ে দিই।’
শিবচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ছয়টি এলাকায় প্রায় এক লাখ মানুষ বাস করে। এর মধ্যে ৭৮ হাজার মানুষ রয়েছে কড়া নজরদারিতে। ওই ছয় এলাকায় বিদেশ থেকে এসেছেন কমপক্ষে আড়াই শ প্রবাসী। তাঁদের প্রত্যেককে কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭টি স্থানে ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করছে পুলিশ। কন্টেইনমেন্ট এলাকাগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এই এলাকায় কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। আর কেউ বাইরে বেরও হতে পারছে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আজ সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলাজুড়ে পুলিশের পাহারা। নির্ধারিত ছয়টি এলাবায় বেশির ভাগ মানুষ ঘরবন্দী। কেউ কেউ ঘর থেকে বের হলেও মাস্ক ব্যবহার করছেন। হাট-বাজারগুলোয় দোকানপাট প্রায় সবই বন্ধ। রাস্তাঘাটে মানুষ বা যানবাহন হাতে গোনা। পুলিশ ও উপজেলার প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ দল প্রতিনিয়ত এলাকা পরিদর্শন করছে বলে জানা যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের এ পদক্ষেপে ও করোনার আতঙ্কে সাধারণ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এলাকাগুলোয় খাবার সংকট ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। দিনমজুরেরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। পাঁচ্চর এলাকার এক নরসুন্দর দোকানের কর্মী বলেন, ‘আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। কী করব, কীভাবে চলব দিশা করতে পারছি না।’
জানতে চাইলে শিবচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলায় এখন যারা নতুন বিদেশ থেকে আসতেছে, আমরা তাদের পাসপোর্টের ফটোকপি সংগ্রহ করতেছি এবং বিদেশফেরত প্রত্যেককে আলাদাভাবে আমরা নজরদারিতে রাখব। আর দিন মজুরদের কথা বিবেচনা করে আমরা ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। আজই নির্ধারিত ওই ৬টি এলাকায় অসহায় ৫০০টি পরিবারকে ত্রাণ দেব। প্রতিটি পরিবারকে আমরা ২০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি তেল, ২ কেজি আলু, সাবান, ওষুধ ও মাস্ক দিয়ে সহযোগিতা করব। আমাদের এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের ১৭টি চেক পয়েন্ট (তল্লাশির স্থান) রয়েছে। ২৫০ পুলিশ সদস্য ২৪ ঘণ্টা মোতায়েন রয়েছে। সাদাপোশাকে কাজ করছে পুলিশ। এ ছাড়া আমরা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। নির্ধারিত এলাকাগুলোয় সমাবেশ, বিয়ের অনুষ্ঠানসহ সব আয়োজন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। নতুন করে আর যেন কেউ আক্রান্ত না হয়, সেই চিন্তা মাথায় রেখেই ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি।’