মাদারীপুরের শিবচরে প্রথম করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত ১৪ মার্চ। এরপর এক সপ্তাহে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় আটজন। পর্যায়ক্রমে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ জনে। এর মধ্যে এক নারীসহ আক্রান্ত দুজন মারাও যান। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ নিয়ে উপজেলার ২২ জনই এখন সুস্থ।
এদিকে চলতি মাসের ৬ তারিখের পর নতুন করে কোনো করোনা শনাক্ত হয়নি এ উপজেলায়। করোনা সংক্রমণের সংখ্যা এ উপজেলায় কমে এলেও মানুষের মধ্যে এখনো রয়েছে আতঙ্ক। যদিও উপজেলার সব দোকানপাট, মার্কেট ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় বাজারঘাটে মানুষের সমাগম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না হওয়ায় নতুন করে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এ সম্পর্কে জেলার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি খান মো. শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, শিবচরে করোনা সংক্রমণ কমেছে। কিন্তু শিবচরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাজৈরে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। জেলায় একজন করোনায় শনাক্ত হলে তা পুরো জেলার জন্যই ঝুঁকি। শিবচরে চিকিৎসাধীন সবাই সুস্থ হলেও ঝুঁকি এখনো আছে। তাই মানুষকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই জেলার সব দোকানপাট ও বাজারগুলোতে মানুষের সমাগম কমানো অতি জরুরি।
জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রমতে, শিবচর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত ২৪ জনের মধ্যে মারা গেছেন ২ জন। ১৪ মার্চ প্রথম শনাক্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই সংখ্যা ৮ জনে দাঁড়ায়। এরপর ১১ দিন কোনো শনাক্ত না হলেও ১ এপ্রিল থেকে পরের ১২ দিনে শনাক্ত হয় ১১ জন। করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫ এপ্রিল থেকে পুরো শিবচর উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন। এর আগে ১৯ মার্চ রাত থেকে দেশের প্রথম ‘কন্টেইনমেন্ট’ (নিয়ন্ত্রিত এলাকা) ঘোষণা করা হয় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে।
সবশেষ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একই পরিবারের ৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ১০ মে থেকে ১৭ মে—এই ৭ দিনে শিবচরে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হন ৫ জন। এর মধ্যে এক নারী চিকিৎসক ও তাঁর ৭ বছর বয়সী এক মেয়েও রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শিবচর উপজেলার আলেপুর এলাকার শহিদুল হাওলাদার (৩৮) নামের এক ঢাকাফেরত যুবককে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন মো. সফিকুল ইসলাম আজ রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলার মধ্যে শিবচর উপজেলায় করোনা পরিস্থিতি ভালো। নতুন সংক্রমণ আপাতত নেই। ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন এক যুবককে সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এখন এই উপজেলায় আক্রান্ত ২৪ জনের ২২ জনই সুস্থ হয়ে বাড়িতে আছেন, আর মারা গেছেন দুজন। শিবচরে আর কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন নেই। তবে ঝুঁকি এখনো আছে। লোকজনকে নিরাপদ রাখতে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীসহ প্রশাসন দিনরাত কাজ করছেন।’
এদিকে শিবচরে নতুন করে সংক্রমণ না থাকায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই উপজেলায় সব ধরনের দোকানপাটে ঈদের বেচাকেনা জমে উঠেছে। হাটবাজারে মানুষের সমাগম বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্ধারিত স্থানগুলোতে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের তদারকি আগের মতো নেই।
জানতে চাইলে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। আমাদের এখানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সবশেষ করোনা শনাক্ত হওয়া এলাকাগুলোকে আমরা বিশেষ নজরদারিতে রেখেছি। তবে আগের তুলনায় আমাদের তদারকি কিছুটা পরিবর্তন হলেও মানুষ সচেতন হয়েছে। বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মানাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ব্যবসায়ীরা তাঁদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।’