প্রায় তিন বছর ধরে একটি ঘরের কক্ষে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল এক ব্যক্তিকে। মানসিক রোগী হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাঁর ছেলেই এ কাজ করেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সহায়তায় খবর পেয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম আজ শনিবার দুপুরে ওই বৃদ্ধকে মুক্ত করেন।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের পিপুলনারী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। শিকলে বাঁধা ওই বাবার নাম ফুল মিয়া (৬০)। আর তাঁর অভিযুক্ত ছেলের নাম আবু হানিফ (৪০)। তিনি গ্রামের একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফুল মিয়া ২০০৩ সালে পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে দা দিয়ে তাঁর স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার মামলায় আদালতের রায়ে ফুল মিয়া ১২ বছর ৫ মাস ১৭ দিন জেল খেটে বের হন। বের হওয়ার কিছুদিন পর তাঁর ছেলে আবু হানিফের সঙ্গে বিবাদ লাগে। এরপর মানসিক রোগী হিসেবে আখ্যা দিয়ে ঘরের একটি কক্ষে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে হানিফ তাঁকে আটকে রাখেন। এ নিয়ে গতকাল শুক্রবার প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে ‘বাবাকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন ছেলে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ইউএনও ফারজানা খানম তাঁর কার্যালয়ের লোকজন ও বাকলজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামকে নিয়ে ওই বাড়িতে হাজির হন। পরে বিষয়টির সত্যতা পেয়ে তিনি ফুল মিয়াকে মুক্ত করেন।
ইউএনও বলেন, ‘এত দিন বিষয়টি আমরা জানতাম না। প্রথম আলোসহ কয়েকটি অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের পর জেনেছি। আজ দুপুরে গিয়ে ফুল মিয়া নামের ওই বৃদ্ধ লোকটিকে বন্দী দশা থেকে মুক্ত করা হয়েছে। খুবই অমানবিকভাবে তাঁকে এত দিন আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। ফুল মিয়ার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন। তাঁর ছেলে আবু হানিফ দোষ স্বীকার করেছেন। এ নিয়ে পরিবারের লোকজন অনুতপ্ত।’
মুক্ত হওয়ার পর ফুল মিয়া এখন কেমন আছেন? জানতে চাইলে তাঁর ছেলে আবু হানিফ বলেন, ইউএনও এসে মুক্ত করে দেওয়ার পর তিনি (ফুল মিয়া) এখন পর্যন্ত বাড়িতে ভালোভাবে চলাফেরা করেছেন। তবে মাঝে-মধ্যে অসংলগ্ন কথা বলেন। কিছুদিন এভাবে দেখে শেষে মানসিক রোগের চিকিৎসক দেখানো হবে।