শামীম ওসমানের পায়ে তৈমুর আলম খন্দকার হাঁটে না

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার
ছবি: প্রথম আলো

‘তৈমুর ওসমান পরিবারের প্রার্থী’ বলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেছেন, ‘শামীম ওসমানের পায়ে তৈমুর আলম খন্দকার হাঁটে না। গত ৫০ বছরে রাজনীতি করতে করতে তৈমুর আলম খন্দকারের ভিত্তি এতটাই শক্ত অবস্থানে যে শামীম ওসমান বা সেলিম ওসমান হয়ে আমাকে নির্বাচনের অভিনয়ে নামতে হবে না।’

আজ রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আইভী নিজ দলের সাংসদ, জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদসহ তাঁকে জড়িয়ে শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্য করেছেন উল্লেখ করে বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক এই উপদেষ্টা মতবিনিময় সভায় অভিযোগ করেন, সরকারি দলের নেতাদের বিভেদ-বিভাজনই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।

গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দরের লক্ষ্মণখোলা এলাকায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের প্রচারণায় অংশ নেন জাপাদলীয় চার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁরা সবাই সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের জাপাদলীয় সাংসদ। তিনি আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমানের বড় ভাই।

এরপর গত শনিবার সকালে আইভী বন্দরের চৌরাপাড়া এলাকায় ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে বলেন, তৈমুর ওসমান পরিবারের প্রার্থী। বিএনপির প্রার্থী নন, তিনি গডফাদার শামীম ওসমানের প্রার্থী। তাঁরাই তাঁকে নামিয়েছেন।

মতবিনিময় সভায় তৈমুর আলম বলেন, নৌকার প্রার্থী আইভী ১৮ বছর ধরে মেয়রের দায়িত্বে আছেন। তিনি জনগণকে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তৈমুর বলেন, সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে। তিনি শুরু থেকেই সেই সুবিধা নিয়ে আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। পদত্যাগী হওয়া সত্ত্বেও দেহরক্ষী, পিএসসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।

হাতি প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তৈমুর বলেন, তাঁর কর্মী-সমর্থকদের পরোক্ষভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবে বলে সরকারি দলের মুখপাত্ররা ঘোষণা দিচ্ছেন, যা নির্বাচন কমিশন ও জনগণকে প্রভাবিত করার শামিল।

তৈমুর আলম বলেন, সরকারি দলের প্রার্থীর অবস্থান এতটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে যে পুলিশ প্রশাসনের লোক দিয়ে ভয়ভীতি ও সরকারদলীয় নেতাদের মাঠে নামাতে হচ্ছে। তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নামায় জাপা চেয়ারম্যানদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর সমর্থক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতাদের পুলিশি হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। করোনাকালে মেয়রের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৈমুর।

মেয়র নির্বাচিত হলে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে তৈমুর বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনকে ঠিকাদার সিন্ডিকেটমুক্ত করবেন। নগরীকে জনবান্ধব, পরিবেশ, নারী ও শিশুবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন। প্রশাসনের বর্তমান কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৈমুর বলেন, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকবে হবে। প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে সিটি নির্বাচনকে কলুষিত করা হলে প্রধানমন্ত্রী ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের নেতা সাবেক সাংসদ এস এম আকরাম, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান প্রমুখ।