শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ ডায়রিয়া রোগী পিরোজপুরের হাসপাতালে ভর্তি

পিরোজপুর সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের শয্যা ও মেঝেতে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বুধবার দুপুরে
ছবি: এ কে এম ফয়সাল

পিরোজপুর সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালে আজ বুধবার সকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৭ জন। সেখানে শয্যার সংখ্যা ২৪। জেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আজ সকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছয় মাস বয়সী চাঁদনী আক্তারকে তার বাবা সজল হাওলাদার হাসপাতালে ভর্তি করান। এরপর দেখা গেল ডায়রিয়া ওয়ার্ডে আর কোনো শয্যা খালি নেই। পরে মেঝেতে বিছানা পেতে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে খরার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পুকুরের পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। এসব পানি ব্যবহারের ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বাসি, পচা খাবার খেয়েও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

আজ দুপুরে সরেজমিনে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যায় ও মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা যায়। রোগীদের বিছানাপত্রের আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা, আছে দুর্গন্ধও।

জেলা সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ জাকি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মেঝেতে রেখে এবং মেডিসিন ওয়ার্ডেও রোগীর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পুরো জেলায় এক সপ্তাহে ৫৯৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। এক মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন। জানুয়ারি থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৭৩৮ জন। এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। এক সপ্তাহে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ১৪১, নাজিরপুরে ২৮, নেছারাবাদে ১০৭, কাউখালীতে ২০, ভান্ডারিয়া ২৩৯, মঠবাড়িয়ায় ৫৮ জন রোগী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। ইন্দুরকানি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তর্বিভাগ চালু না হওয়ায় সেখানে কোনো রোগী চিকিৎসা নিতে পারছেন না।

ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণত ডায়রিয়ার জন্য ১৫টি শয্যা থাকে। তবে রোগী বেড়ে গেলে সাধারণ ওয়ার্ডে ও হাসপাতালের মেঝেতে রোগীদের রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

কয়েকজন রোগী বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা। এখানে ডায়রিয়া চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে।

সদর হাসপাতালের নার্স মুহাদি হালদার বলেন, চারটি ওয়ার্ডের জন্য একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছেন। এ জন্য হাসপাতালের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে অসুবিধা হচ্ছে।