হাতেম আলী। শত বছর পার করেছেন অনেক আগেই। লাঠি ভর দিয়েই তাঁকে হাঁটতে হয়। অনেক চেষ্টা করেছেন একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেতে। কিন্তু হাতেম আলীর ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতার সেই কার্ড।
হাতেম আলীর এখন একটিই প্রশ্ন, আর কত বয়স হলে তিনি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাবেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাতেম আলীর বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের চিনাখোলা গ্রামে। এ গ্রামের মৃত নছের মণ্ডল ও মৃত ময়রী বেগমের সন্তান তিনি। তাঁর নিজেরও রয়েছে ছয় মেয়ে ও পাঁচ ছেলে। বড় ছেলের বয়স ৮০ বছরের ওপর। জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মসাল (১৯১৩) অনুযায়ী হাতেম আলীর বর্তমান বয়স ১০৬ বছর।
স্থানীয়দের কেউ কেউ বলেন, হাতেম আলীর বয়স আরও বেশি হবে। হাতেম আলীর দাবি, তাঁর বয়স ১২১ বছর। এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁর আক্ষেপ, এখনো তিনি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাননি। প্রথমে তিনি চৌকিদারের (গ্রাম পুলিশ) পেছনে ঘুরেছেন ভাতার জন্য। পরে জানতে পারেন, চৌকিদারদের ভাতার কার্ড দেওয়ার ক্ষমতা নেই। পরে পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। এতেও তাঁর কোনো লাভ হয়নি। তাঁর প্রশ্ন, ‘আর কত বয়স হলে আমি বয়স্ক ভাতা পাব?’
হাতেম আলী বলেন, তিনি কয়েকবার স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে বয়স্ক ভাতার জন্য অনুরোধ করেছেন। সাবেক ইউপি সদস্যের কাছেও গিয়েছেন একাধিকবার। কেউ তাঁকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেননি। এত ঘুরেও ভাতার কার্ড না পেয়ে শেষ বয়সে তিনি হতাশ। তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভাতার কার্ডের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মীর আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, হাতেম আলীর জাতীয় পরিচয়পত্রে একটু সমস্যা ছিল। এ জন্য তাঁর কার্ড হয়নি। তবে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এ ব্যাপারে পাথরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. হানিফুজ্জামান লিটন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী জুন মাসে বয়স্ক ভাতার নতুন তালিকা হবে। তখন অবশ্যই হাতেম আলীর নাম বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেলদুয়ার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখনো এ রকম বয়স্ক লোক বয়স্ক ভাতার আওতায় পড়েননি, এটা তাঁর জানা ছিল না। যত দ্রুত সম্ভব হাতেম আলীর বয়স্ক ভাতার কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।