চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরীর (৬০) বিরুদ্ধে বাড়িঘরে হামলা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলা সদরের আমিরাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়াকুল এলাকার মো. মাহমুদুল হকের ছেলে সিরাজুল হক (৪১) বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় জিয়াউল হক চৌধুরী ছাড়াও তাঁর বড় ভাইয়ের ছেলে ইনজামুল হক চৌধুরীসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা জানা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বেশ কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বোয়ালিয়াকুল এলাকায় লোহাগাড়া মা-মণি হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী কিছু জায়গা এস আলম গ্রুপকে গাড়ির কাউন্টার তৈরির জন্য বিক্রি করেছেন। ওই জায়গার পাশ দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল হকসহ এলাকার লোকজন চলাচল করেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই চলাচলের রাস্তা ও পাশের বোয়ালিয়া খালের গতি পরিবর্তন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে সিরাজুল হক পক্ষের বিরোধ চলে আসছিল।
গত বুধবার দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি সশস্ত্র দল সিরাজুল হকদের চলাচলের রাস্তা দখল করে দেয়াল ও গেট তৈরির চেষ্টা চালান। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন বাধা দেন। পরে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে একটি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মহড়া দেন। এ সময় প্রতিপক্ষের বাড়ি লক্ষ্য করে তাঁর লোকজনকে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ফাঁকা গুলি ছোড়ার শব্দ শোনা যায়।
ওই দিন রাতে উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে মহড়া দেওয়া ও প্রতিপক্ষের বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
মামলায় জিয়াউল হক চৌধুরী ছাড়াও তাঁর বড় ভাইয়ের ছেলে ইনজামুল হক চৌধুরীসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম আজ শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চলাচলের রাস্তা দখল করে ও পাশের বোয়ালিয়া খালের দিক পরিবর্তন করে আমার পৈতৃক সম্পত্তি দখলে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। গত বুধবার দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই সশস্ত্রভাবে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার জায়গা দখলে নেওয়ার জন্য আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছেন। পরে তাঁরা আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন। তাই উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার আশা করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জায়গাজমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধপূর্ণ জায়গায় দেয়াল ও গেট নির্মাণ করতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন বাধা দেন। পরে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘর লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে জাতীয় পার্টি করতেন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদের হাত ধরে এলডিপিতে যোগ দিয়েছিলেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তবে ওই সময় তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।