চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের গুঁড়িয়ে দেওয়া অবৈধ একটি ইটভাটা আবারও চালু করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ওই ইটভাটায় টিনের চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া উপজেলার বার আউলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পাশে গুঁড়িয়ে দেওয়া আরেকটি ইটভাটা নতুন করে গড়ে উঠেছে। এতে আশপাশের এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বছরের শুরুর দিকে উপজেলার উজিরভিটা এলাকায় অবৈধভাবে নির্মাণ করায় কেএনবি ইটভাটাটি পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ইটভাটার মালিক লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি ও লোহাগাড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুচ্ছফা চৌধুরী। চলতি বছর টিনের চিমনি দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া ওই ভাটাটি আবারও চালু করেছেন তিনি। ইটভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকার পরিবেশে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উজিরভিটা এলাকায় গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটভাটাটি টিনের চিমনি তৈরি করে ইট পোড়াচ্ছে। ভাটার পাশে জায়গায় জায়গায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঠ। ভাটার ধুলাবালু ও ধোঁয়া আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। আর বার আউলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পাশের ইটভাটটি নতুন করে গড়ে উঠেছে। সেখানেও ইট তৈরির জন্য ফসলি জমির মাটি মজুত করা হচ্ছে।
কেএনবি ইটভাটার মালিক নুরুচ্ছফা চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে ইটভাটার ব্যবস্থাপক আবুল কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো ধরনের সময় না দিয়েই ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেওয়ায় মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ওই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে আপাতত টিনের চিমনিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এতে পরিবেশের তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।’ বিএবি ইটভাটার মালিক আলী আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব কিছু ঠিকঠাক করে এবং অনুমতি নিয়েই নতুন করে ইটভাটাটি চালু করা হয়েছে। এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।’
পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের রিট পিটিশনের আদেশ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইট পোড়ানোর লাইসেন্স না থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার অন্তত ৪০টি ইটভাটার মালামাল নষ্টসহ চিমনি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে কেএনবি ও বিএবি ইটভাটা আবারও নতুন করে চালু হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ইটভাটা মালিকেরা উচ্চ আদালত থেকে ছয় মাসের জন্য একটি আদেশ নিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন। কিন্তু টিনের চিমনিতে তৈরি কোনো ইটভাটা থাকতে পারবে না। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর মালিক আবারও নতুন করে টিনের চিমনি দিয়ে ইটভাটা তৈরি করে নিয়েছেন। এরপর প্রশাসনের আর তেমন তদারকি দেখা যায়নি। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কিছু ইটভাটা সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। লাইসেন্স নেই এবং পরিবেশবান্ধব নয়, এমন ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অবিলম্বে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
বার আউলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ইটভাটার ধুলাবালি ও ধোয়ার কারণে আশপাশের পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কলেজের পাশে ইটভাটা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ইটভাটার কারণে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তেমন মানুষ ও প্রাণী স্বাস্থ্যগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।