চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের আগ্নেয়াস্ত্র হাতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। লোহাগাড়া উপজেলা সদরের বোয়ালিয়াকুল এলাকায় জায়গা দখল করতে গিয়ে তিনি এই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও এক পক্ষকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার বেলা দুইটার দিকে লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল উপজেলা সদরের আমিরাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়াকুল এলাকায় যায়। পরে তারা সেখানে সৌদি আরবপ্রবাসী সিরাজুল ইসলামের জায়গা দখল করার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের কারও হাতে ধারালো অস্ত্র আবার কারও হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরীর হাতে একটি বন্দুক দেখা গেছে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান বন্দুকটি তাঁর পক্ষের একজনের হাতে তুলে দেন। এ সময় কয়েকটি ফাঁকা গুলির শব্দও শোনা যায়। পরে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
সিরাজুল ইসলাম বছরখানেক আগে দেশে আসার পর থেকে করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে দেশেই অবস্থান করছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জায়গার পেছনে উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউলের কিছু জায়গা আছে। ওই জায়গায় যাওয়ার জন্য তাঁর কোনো রাস্তা নেই। রাস্তা তৈরির জন্য তিনি আমার কাছে জায়গা কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে আমি জায়গা বিক্রি করতে রাজি নই। এ কারণে তিনি বিভিন্ন সময়ে আমার ক্ষতি করার পাশাপাশি চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন। বুধবার দুপুরের দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই সশস্ত্র হয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার জায়গা দখল করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তাঁরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও এক পক্ষকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এস আলম গ্রুপের কাছে গাড়ির কাউন্টার তৈরির জন্য এক কানি (৪০ শতক) জমি বিক্রি করেছি। ওই জায়গা ভরাটসহ গেট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে দেওয়ার কথা ছিল। ওই জায়গায় একটি গেট নির্মাণ করতে গেলে সিরাজের পক্ষের লোকজন নির্মাণশ্রমিকদের ওপর হামলা করেন। এ সময় একজন শ্রমিককে তাঁরা কুপিয়ে আহত করেছেন। ওই জায়গা সিরাজের নয়। তাঁর জায়গা পাশের খালে বিলীন হয়ে গেছে।’
অস্ত্রের মহড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে আমার গাড়িতে আমার লাইসেন্স করা বন্দুকটি রাখা হয়। তাঁরা আমার শ্রমিকদের ওপর হামলা চালালে আমার এক কর্মীকে বলেছি বন্দুকটি বের করতে। এ সময় বন্দুকটি বের করা হলেও কোনো ফায়ার করা হয়নি। অথচ তাঁরাই দুটি ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। তা ছাড়া আমার সঙ্গে থাকা লোকজনের কারও কাছে কোনো অবৈধ অস্ত্র ছিল না।’
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জায়গাজমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জের ধরে উপজেলা চেয়ারম্যানের বন্দুক হাতে একটি ভিডিও বুধবার রাতে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান ওই বন্দুক লাইসেন্স করা বলে জানিয়েছেন। তবে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনি কোনো কাগজপত্র থানায় জমা দেননি। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখছি।’
উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের আমলে জাতীয় পার্টি করতেন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদের হাত ধরে এলডিপিতে যোগ দিয়েছিলেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তবে ওই সময় তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।