টিসিবির পণ্য

লাল কার্ড দিয়ে হলুদ কার্ড নিতে দৌড়াদৌড়ি

প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে একটু কম দামে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের অপেক্ষা। রোববার সকালে ময়মনসিংহ নগরের ঢোলাদিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

টিসিবির পণ্যবোঝাই দুটি ট্রাকের দূরত্ব আনুমানিক ১০০ মিটার। একটি ট্রাক থেকে নারীরা পণ্য কিনবেন; অপর ট্রাক থেকে পুরুষেরা। পণ্য বিক্রি শুরু হতেই নারীদের মধ্যে দেখা যায় দৌড়াদৌড়ি। তাঁরা তাঁদের নির্ধারিত ট্রাকের কাছ থেকে দৌড়ে অপর ট্রাকটির কাছে যাচ্ছেন। আবার ফিরে আসছেন। কাছে যেতেই বোঝা গেল তাঁদের এই দৌড়ের মানে।

এ রকম দৌড়ে ক্লান্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের একজন রজিমা খাতুন বলেন, তাঁদের হাতে আছে লাল রঙের কার্ড (অপেক্ষাকৃত লাল)। এ লাল রঙের কার্ড ডিলারের লোকের কাছে জমা দিয়ে একটি হলুদ রঙের কার্ড সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। ওই হলুদ রঙের কার্ডটি ট্রাকের কাছে নিয়ে গেলে পণ্য কিনতে পারবেন। এ কারণে নারীদের এমন দৌড়। তবে পুরুষের জন্য নির্ধারিত ট্রাকে কার্ড বদল হচ্ছে বলে তাঁদের দৌড়াতে হচ্ছে না।

পণ্য কেনার পর আবার হলুদ রঙের কার্ডটিও রেখে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। বলা হচ্ছে পরে কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে কার্ডটি আবার সংগ্রহ করতে হবে। এতে অনেকে সংশয়ে আছেন যে পরে কার্ডটি আবার সংগ্রহ করতে পারবেন কি না।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির প্রথম দিন রোববার সকালে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ঢোলাদিয়া কেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা যায়।

এমন অব্যবস্থাপনায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা মানুষ। চান মিয়া (৬৫) নামের একজন কার্ডধারী বলেন, এটা কোনো সিস্টেম হতে পারে না। এভাবে কার্ড রেখে দিয়ে আবার সংগ্রহ করতে বলার বিষয়টি ঠিক হচ্ছে না।

টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরুর দিনে ময়মনসিংহ জেলায় মোট ৪২ হাজার ২৮২ জন কার্ডধারী পণ্য কিনতে পারবেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের তিনটি ওয়ার্ড ও জেলার ১০টি পৌর শহরে এসব পণ্য বিক্রি করছেন টিসিবির ডিলাররা।

প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে একটু কম দামে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের অপেক্ষা। রোববার সকালে ময়মনসিংহ নগরের কাশর এলাকায়

সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ নগরের তিনটি পণ্য বিক্রয় কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, মানুষের ভিড়। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাশর বউ বাজারে দেখা যায় টিসিবির পণ্যের ট্রাক ঘিরে ক্রেতাদের ভিড়। সেখানে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে ট্রাকটি দাঁড় করানোয় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। এখানেও দেখা গেছে পণ্য বিক্রর পর ক্রেতার কার্ড রেখে দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে ২৩ মার্চ স্থানীয় ওয়ার্ড কার্যালয় থেকে আবার কার্ড সংগ্রহ করে পরে পণ্য কিনতে হবে।

টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরুর আগের দিন গত শনিবার ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। টিসিবির ডিলাররা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ডিলারদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, পণ্য বিক্রির পর কার্ডে তা উল্লেখ করে টিসিবির ডিলার অথবা ডিলারের পক্ষের কেউ স্বাক্ষর করে তাৎক্ষণিক কার্ডটি সুবিধাভোগীদের ফেরত দিতে হবে। তবে এ নিয়ম মানা হয়নি প্রথম দিনে। একমাত্র নগরের সাহেব পার্ক এলাকায় দেখা গেছে পণ্য বিক্রির পর স্বাক্ষর করে কার্ডটি তাৎক্ষণিক ফেরত দিয়ে দিতে।

ঢোলাদিয়া ও কাশর বউ বাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রেতাদের কাছে সুবিধাভোগীদের কার্ড রেখে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, একই ব্যক্তি যেন কোনোভাবেই দ্বিতীয়বার পণ্য কিনতে আসতে না পারেন, সে কারণেই কার্ড রেখে দেওয়া হচ্ছে।

টিসিবির ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বজলুর রশিদ বলেন, পণ্য বিক্রির পর ডিলারের স্বাক্ষর করে কার্ড ফেরত দেওয়ার নিয়ম। যদি কোথাও কার্ড রেখে দেওয়া হয়, তবে সেটি অনিয়ম। হয়তো ক্রেতা বেশি হওয়ায় সময় না পেয়ে এমনটা করতে পারে।

তবে কার্ড সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কার্যালয়ে জমা রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলররা। শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, প্রথম দিকে কিছু কার্ড জমা রেখে দেওয়া হয়েছিল। এটা একটা ভুল–বোঝাবুঝি ছিল। পরে আর কার্ড রেখে দেওয়া হয়নি। যাঁদের কার্ড রেখে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ফোন করে ডেকে এনে কার্ড ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

পবিত্র রজমান মাস উপলক্ষে সরকার সারা দেশে এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দেবে। এর অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ জেলার ৩ লাখ ২ হাজার ৯৭২ জন মানুষ পাচ্ছেন এ সুবিধা। প্রথম পর্যায়ে প্রত্যেক ক্রেতাকে দেওয়া হচ্ছে ১১০ টাকা প্রতি লিটার দরে ২ লিটার সয়াবিন, ৫৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি চিনি ও ৬৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল।