লালমনিরহাটের ঘটনায় তিন মামলা, গ্রেপ্তার ৫

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারীতে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে শনিবার সকালে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা এবং পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ ও বুড়িমারী প্রথম বাঁশকল এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর, পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানাসহ পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শন শেষে দুপুরে তাঁরা পাটগ্রাম শহীদ আফজাল হোসেন মিলনায়তনে উপজেলার সব মসজিদের ঈমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় ধর্মীয়সহ যেকোনো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কেউ যেন গুজব ছড়িয়ে বা মিথ্যা অভিযোগ তুলে বেআইনি কাজ করতে না পারেন, সে জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির নাম আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী (৫০)। তাঁর বাড়ি রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ায়। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক। একই ঘটনায় গণপিটুনিতে আহত হন সুলতান জোবায়ের নামের একজন। তাঁর ও শহীদুন্নবীর বাড়ি একই এলাকায়।

পুলিশ ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, পবিত্র কোরআনের অবমাননার অভিযোগে বৃহস্পতিবার আসরের নামাজের পর বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে শহীদুন্নবী ও জোবায়েরকে মারধর করেন পাঁচ থেকে ছয়জন ব্যক্তি। এরপর তাঁদের ইউপি কার্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হয়। পুলিশের ভাষ্য, ঘটনাটি জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা বুড়িমারী ইউপি চত্বরে জমায়েত হয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দুজনকে মারধর করেন। পুলিশ জোবায়েরকে সরিয়ে নিতে পারলেও শহীদুন্নবীকে উদ্ধার করতে পারেনি। সেখানেই গণপিটুনি দিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় তাঁকে।

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় নিহত শহীদুন্নবীর চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম পরিবারের পক্ষে শুক্রবার রাতে পাটগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ২০-৩০ জনের নাম–পরিচয় উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

একই দিন রাতে দ্বিতীয় মামলাটি করেন পাটগ্রামের বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত। এ মামলায় শহীদুন্নবীকে ছিনিয়ে নিতে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা–জানালা ভাঙচুরসহ আসবাবের ক্ষতি সাধনের অভিযোগ আনা হয়। এই মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০–৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধাদান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অভিযোগে তৃতীয় মামলাটি করেন পাটগ্রাম থানার এসআই শাহজাহান আলী। এসব মামলার বিপরীতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে এখন তাঁদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, উল্লেখিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে।