লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে রাস্তা পাকাকরণ বন্ধে বেলার আইনি নোটিশ

বন বিভাগের আপত্তি উপেক্ষা করে জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরু করেছে এলজিইডি
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের ভেতরে রাস্তা পাকাকরণ বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। আজ বুধবার আইনি নোটিশটি পাঠানো হয় বলে বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আইনি নোটিশের বরাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লাঠিটিলা বন পাথারিয়া হিল রিজার্ভ ফরেস্টের একটি অংশ। প্রাকৃতিক মিশ্র চিরসবুজ এ বনের আয়তন ৫ হাজার ৬৩১ একর। ১৯২০ সালের ২১ এপ্রিল সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বনকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। এ বনাঞ্চলে ২০৯ প্রজাতির প্রাণী ও ৬০৩ ধরনের উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। এটি পরিবেশগতভাবে অরক্ষিত ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য হটস্পটের অংশ এবং দেশের ছয়টি আন্তসীমান্ত সংরক্ষিত বনের একটি।

লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের ভেতরে এলজিইডি এক কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরু করেছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক সংবাদমাধ্যম। বিষয়টি উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংরক্ষিত বনে এ ধরনের রাস্তা নির্মাণ করা হলে বনের অনেক পুরোনো সেগুনগাছ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। বনের ভেতর দিয়ে যানবাহন চলাচলের কারণে বন্য প্রাণী মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হবে এবং বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বনের মূল্যবান সেগুনগাছ চুরির ঘটনাসংক্রান্ত সংবাদ প্রায়ই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়ে থাকে। সংরক্ষিত বনের মধ্যে রাস্তা পাকা হলে সেগুনগাছ চুরি বহুগুণ বেড়ে যাবে।

দেশের বনভূমির সংরক্ষণ নিয়ে বেলা কর্তৃক দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেওয়া হাইকোর্টের একটি আদেশও উল্লেখ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। ওই আদেশ অনুযায়ী, দেশের বিদ্যমান বনভূমির যথাযথ সংরক্ষণ জরুরি। এর অংশ হিসেবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে লাঠিটিলা বনকে সমৃদ্ধিশালী করে তার যথাযথ সংরক্ষণ করার জোরালো দাবি জানিয়েছে বেলা। আইনি নোটিশে লাঠিটিলা বনের ভেতর রাস্তা পাকাকরণের কাজ বন্ধসহ সেখানে বনবিরুদ্ধ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়। বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না স্বাক্ষরিত নোটিশে এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সাত দিনের মধ্যে বেলাকে অবহিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, এলজিইডির মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী, জুড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্যারাডাইস কনস্ট্রাকশনের মালিক সাইদুল ইসলাম।

এলজিইডি ও বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লাঠিটিলা এলাকায় লাঠিছড়া থেকে লালছড়া হয়ে রুপাছড়া পর্যন্ত কাঁচা রাস্তার শুরু থেকে এক কিলোমিটার পাকাকরণের জন্য এলজিইডি দরপত্র আহ্বান করে। প্রায় ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্যারাডাইস কনস্ট্রাকশন নামের স্থানীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। কার্যাদেশে ২ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করতে বলা হয়। চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা সম্পন্ন হওয়ার কথা।

সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের জন্য রাস্তার পাশে ইট স্তূপ করা শুরু করে। পরে বন বিভাগের লোকজন খোঁজ নিয়ে রাস্তায় কাজ করানোর বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর বন বিভাগের স্থানীয় লাঠিটিলা বিটের ফরেস্টার সালাহ উদ্দিন এ বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলীর কাছে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে সংরক্ষিত বন এলাকায় কোনো ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়। এ ছাড়া রাস্তাটির কাজের দরপত্র আহ্বানের আগে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো পরামর্শ বা অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। তাই অনতিবিলম্বে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। বন বিভাগের বাধা উপেক্ষা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরু করে ফেলে।

এ নিয়ে ২৪ এপ্রিল প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে ‘বন বিভাগের বাধা, মন্ত্রীর ডিও লেটারে কাজ শুরু’ এবং ১৭ এপ্রিল প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘জুড়ীর সংরক্ষিত বনে রাস্তা করতে চায় এলজিইডি, কাজ বন্ধে বন বিভাগের চিঠি’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।