মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক ও রেলপথে প্রায়ই মারা যাচ্ছে বন্য প্রাণী। এ ছাড়া উদ্যানে ভেতর দিয়ে যাওয়া ৩৩ হাজার কেভি বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। প্রতি মাসে এই উদ্যানের সড়কে গাড়িচাপায় মারা যায় গড়ে ছয়টি বন্য প্রাণী।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়ক পার হওয়ার সময় গাড়িচাপায় বিপন্ন প্রজাতির একটি শজারু মারা যায়। এ ঘটনার ১২ দিনের মধ্যে রাত আটটায় একই সড়কে গাড়িচাপায় মারা গেছে একটি গন্ধগোকুল। এর দেড় মাসের ব্যবধানে গাড়ির ধাক্কায় একটি বানরের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ জানুয়ারি রাত নয়টার দিকে উদ্যানের ডলুবাড়ি এলাকায় ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইন স্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছে একটি বানর। বানরটি এখনো চিকিৎসাধীন।
মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, সাধারণত রাতে বন্য প্রাণী চলাচল করে থাকে। রাতে চলাচল করা গাড়ির চাপায় বন্য প্রাণী মারা যাচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে ছয়টি প্রাণী মারা যায়। এভাবে গত দুই বছরে দেড় শতাধিক বন্য প্রাণী মারা গেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন জাতের ব্যাঙ, সাপ, শজারু, বানর, হরিণ, গন্ধগোকুল ও বন্য শূকর রয়েছে। তবে গাড়িচাপায় সবচেয়ে বেশি মারা যায় ব্যাঙ ও সাপ।
সম্প্রতি লাউয়াছড়া উদ্যানসংলগ্ন বটতল এলাকায় একটি শঙ্খিনী সাপ গাড়িচাপায় মারা পড়েছে। উদ্যানের ভেতরের সড়ক, রেলপথ ও বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে উদ্বিগ্ন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, চালকেরা বেশির ভাগ অসচেতন বলে দ্রুতগতিতে যানবাহন চালানোর কারণে বন্য প্রাণী মারা যাচ্ছে।
এদিকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প সড়ক চালুর কথা। বিকল্প সড়ক চালু হলে বন্য প্রাণীর মৃত্যু কম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে রেলপথ ও বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে বিকল্প সড়ক হওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। ১৯৯৭ সালের মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের সময় কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল মূল সড়কটি বন্ধ ছিল। তখন তিনি উদ্যোগ নিয়ে ডলুছড়া-মাধবপুর-ভাষানিগাঁও হয়ে একটি বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। রাস্তাটি এখনো চলমান।