১০টি নাগরিক সংগঠনের বিবৃতি

লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ

ঝালকাঠিতে মাঝনদীতে যাত্রীবাহী অভিযান–১০ লঞ্চে আগুন লাগে
ফাইল ছবি

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও চার সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে ১০টি নাগরিক সংগঠন।

আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব নাগরিক সংগঠন। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিষ কুমার দে স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের জন্য দায়ী সবার দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর নেতারা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার নৌ প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন গণমাধ্যমকে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কেউ রেহাই পাবেন না; সবাকেই শাস্তি পেতে হবে।

তিনি আরও বলেছিলেন, প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট শিপ সার্ভেয়ারসহ (ফিটনেস প্রদানকারী প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক) নৌপরিবহন অধিদপ্তর এবং বিআইডব্লিউটিএর কয়েকজন কর্মকর্তার পাশাপাশি লঞ্চের মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারদের দায়ী করা করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারির পরও দায়ী সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের পদে বহাল থাকায় সচেতন দেশবাসীর মনে প্রশ্ন জেগেছে। তা হলো অতীতের মতো এবারও কি প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবেন?
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ার কাছে পদ্মা নদীতে এমএল পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনা এবং ২০০৩ সালে চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনায় এমভি নাসরিন লঞ্চে দুর্ঘটনা হয়। এসব ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে লঞ্চ দুটির ফিটনেস প্রদানকারী দুই শিপ সার্ভেয়ারকে দ্রুত (তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার আগে) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় মামলা করা হয়েছিল।

কিন্তু এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড ও ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; এমনকি তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পরও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদিও নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে লঞ্চটির মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গত ৩ ডিসেম্বর রাতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুনে পুড়ে ও পানিতে ডুবে মারা গেছেন ৪৯ যাত্রী। এ ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি ৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনার জন্য লঞ্চের চার মালিক ও চার মাস্টার-ড্রাইভারকে দায়ী করা হয়েছে।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারক মো. মাহবুবুর রশিদ, পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীনের দায়িত্বে অবহেলার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মামলায় আট আসামির মধ্যে তিন মালিক ও চারজন মাস্টার ও একজন ড্রাইভার কারাগারে আছেন।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজি মোহাম্মদ শহীদ মিয়া, গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশের (জিসিবি) সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুর রহমান, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগের সভাপতি শেখ ওমর ফারুক, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ সিকদার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র, মিডিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্টের (মেড) নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী ও পুরান ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন।