শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি

লঞ্চমালিকের মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের সংবাদ সম্মেলন। সোমবার দুপুরে
প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় লঞ্চমালিকের মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বদিউজ্জামান বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর প্রশস্ততা কমে গেছে। শিল্পকারখানার কারণে ভারী জাহাজ চলাচল বেড়েছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করেনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ কারণে প্রায়ই নৌ দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি অভিযোগ করেন, এ পর্যন্ত পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেকোনো নৌ দুর্ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ আগে মামলা করে। তাদের সেই মামলায় কখনো ধাক্কা দেওয়া নৌযানের মালিককে আসামি করা হয় না। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চমালিকেরা মামলা করতে চাইলেও তাঁরা মামলা করতে পারেন না। বারবার প্রতিবাদ করার পরও কোনো কাজ হয়নি। উপরন্তু যে লঞ্চ ধাক্কা খেয়ে ডুবে গেল, তার মালিকের বিরুদ্ধেই মামলা করা হলো।

বদিউজ্জামান অভিযোগ করেন, রোববারের লঞ্চডুবির ঘটনায় বন্দর থানায় লঞ্চের মালিক কর্তৃপক্ষ মামলা করতে গেলেও মামলা নেওয়া হয়নি। নৌ পুলিশের তদন্ত শেষে মামলা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, মামলা করার দায়িত্ব ডিজি শিপিং করপোরেশনের। তা না করে জড়িত ব্যক্তিদের বাঁচাতে বিআইডব্লিউটিএ সব মামলা করে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে বদিউজ্জামান বলেন, যেকোনো নৌ দুর্ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ আগে মামলা করে। তাদের সেই মামলায় কখনো ধাক্কা দেওয়া নৌযানের মালিককে আসামি করা হয় না।

নারায়ণগঞ্জ থেকে সাতটি রুটে চলাচলকারী সব লঞ্চের জরিপ প্রতিবেদন রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদীবন্দরের পরিচালক রফিকুল ইসলাম মৌখিকভাবে স্থানীয় বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে আজ সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে সব রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি দ্রুত নারায়ণগঞ্জ থেকে সব রুটে চলাচলরত লঞ্চ পুনরায় চালুর জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মাসুদ কামাল বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝুঁকি বিবেচনায় বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চলাচলরত সব লঞ্চের চলাচল রাত থেকে সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।

মামলা না নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগ দেওয়ায় মামলা নেওয়া হয়নি। একটি দুর্ঘটনায় একটি মামলা হবে। নৌ পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে লঞ্চমালিক পরিপূর্ণ মামলা দিলে মামলা নেওয়া হবে।

সোমবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুজ্জামান, সহসভাপতি অহিদুজ্জামান, নুরুল আমিন, সদস্য আলমগীর মিয়া প্রমুখ।

গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর সোনাকান্দা এলাকায় রূপসী-৯ কার্গো জাহাজের ধাক্কায় এম এল আফসার উদ্দিন-২ যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যায়। ঘটনার পর কার্গো জাহাজ রূপসী-৯ পালিয়ে যায়। লঞ্চে থাকা অর্ধশতাধিক যাত্রীর অনেকে সাঁতরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ থাকেন কয়েকজন। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে দুই শিশুসহ সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জের হোসেনদি এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া কার্গো জাহাজ রূপসী-৯ ও এর মাস্টারকে আটক করে নৌ পুলিশ।

লঞ্চডুবির এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম ব্যাপারীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বজলুর রশিদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় এসকেএল-৩ কার্গো জাহাজ ধাক্কা দিয়ে যাত্রীবাহী লঞ্চ এম এল সাবিত আল হাসানকে ডুবিয়ে দিলে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।