লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় নারকেলের আবাদ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় অন্তত ৩০ লাখ ৭৫ হাজার নারকেলগাছ রয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে নারকেলগাছ থেকে ডাব কিনে নেন। প্রতি বছর গরম ও রমজানের সময় ডাবের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদার কারণে এখন গ্রামে প্রতিটি ডাব ২৮-৩০ টাকায় বিক্রি হয়। সেই ডাব ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে খুচরা বাজারে দাম ওঠে গড়ে ১০০ টাকা।
লক্ষ্মীপুর ও ঢাকার বাজারের সঙ্গে ডাবের দামের ফারাক ৭০ টাকা। স্থানীয় পাইকারদের দাবি, খুচরা বিক্রেতারা সবচেয়ে বেশি লাভ করেন। চার হাত ঘুরে ডাবের দাম তিন–চার গুণ বেড়ে যায়।
ডাব ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীত মৌসুমে ডাবের ফলন কম হয়। শীতের এক-দুই মাস পরে ডাবের ফলন বেশি হয়। টানা নভেম্বর মাস পর্যন্ত উৎপাদন হয়। তবে এবার তুলনামূলক ডাবের উৎপাদন কম। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পবিত্র রমজান মাসের বাড়তি চাহিদা।
গ্রামে ঘুরে ঘুরে ডাব ব্যবসায়ীরা গাছমালিকের কাছ থেকে কেনার পর নিয়ে গাছে উঠে কেটে নেন ডাব। তাঁরা ১০০ ডাব কেনেন ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। সারা দিন ঘুরে ডাব কিনে গ্রামের সড়কের পাশে জড়ো করে রাখেন। পরে তাঁরা পাইকারের কাছে বিক্রি করেন ৪ হাজার টাকায়। পাইকারের লোকজন বিকেলে বা সন্ধ্যায় পিকআপ নিয়ে গ্রাম থেকে ডাব সংগ্রহ করে নেন। পরে পাইকার সব ডাব একত্র করে ট্রাকযোগে ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন আড়তে পাঠান। আড়তদার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন।
এবার তুলনামূলক ডাবের উৎপাদন কম। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পবিত্র রমজান মাসের বাড়তি চাহিদা।
দীর্ঘ সময় ধরে ধরে ডাবের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন দালাল বাজার এলাকার পাইকার মো. নুরুজ্জামান ও শাহ আলম। তাঁরা জানান, পুরো জেলায় ৭০-৮০ জন ডাবের বড় পাইকার রয়েছেন। তাঁরা দাদন দিয়ে গ্রামের ডাব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডাব কেনেন। তাঁদের গড়ে প্রতি ডাবে ৮-১০ টাকা লাভ দিয়ে তাঁরা কেনেন। পরে ট্রাক ভাড়া করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠান। আড়তে দেওয়ার পর ট্রাকভাড়াসহ বিভিন্ন খরচের পর তাঁরা গড়ে প্রতি শ ডাবে পান ৪ হাজার ৫০০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি ট্রাক ডাবে গড়ে ৪-৫ হাজার টাকা লাভ হয় তাঁদের। অনেক সময় বাজার খারাপ থাকলে লোকসানও হয়। তাঁদের দাবি, খুচরা বিক্রেতারা সবচেয়ে বেশি লাভ করেন।
তাঁরা আরও জানান, লক্ষ্মীপুর থেকে প্রতিদিন গড়ে শুধু ঢাকায় ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক ডাব পাঠান স্থানীয় পাইকাররা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও ২০-২৫ ট্রাক ডাব পাঠানো হয় লক্ষ্মীপুর থেকে। প্রতি ট্রাকে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত ডাব থাকে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোহাইমেন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় ২ হাজার ৫৬৩ হেক্টর জমিতে নারকেল চাষ হচ্ছে। প্রতি শতাংশ জমিতে গড়ে ১২টি নারকেলগাছ থাকে। সে হিসাবে ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৬০০ গাছ রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদরে বেশি। এর পরের অবস্থান রামগঞ্জ, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি। গত বছর নারকেল উৎপাদন হয়েছিল ৫৫ হাজার মেট্রিক টন।
ঢাকার হাজারীবাগ খলিল সর্দার কৃষি মার্কেটে লক্ষ্মীপুর ফল ভান্ডার নামে একটি আড়ত রয়েছে নুরুল আলম কবিরের। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তাঁর আড়তে আজ বৃহস্পতিবার ডাব বিক্রি হয়েছে গড়ে ৪৮ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি শ ডাব ৪ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ থেকে তিনি কমিশন পেয়েছেন। খুচরা বিক্রেতাদের ভ্যান ভাড়া, রাস্তায় বিভিন্ন খরচের পর প্রতি ডাবে আরও গড়ে ১০ টাকা খরচ হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রেতারা প্রতিটি ডাব বিক্রি করেন ১০০ টাকায়। প্রতি ডাবে গড়ে খুচরা বিক্রেতা লাভ করেন ২০ থেকে ৪০ টাকা।