সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকেই রক্ষা নেই। আজ রোববার সকাল থেকেই বগুড়া শহরের রাস্তায় ঢল নেমেছিল মোটরসাইকেল, কার, পিকআপসহ নানা যানবাহনের। আর এসব যানবাহনের দাপটে শহরে ছিল প্রচণ্ড যানজট, ভোগান্তিতে নাজেহাল ছিলেন পথচারীরা।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান লকডাউনে শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের যখন হিমশিম অবস্থা, তখন পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আশরাফ ভূঞা নিজেই নেমে আসেন রাস্তায়। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় ট্রাফিক পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এক ঘণ্টা ধরে যানবাহন আটকের অভিযান পরিচালনা করেন। বৈধ কাগজপত্র না থাকা, লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ২০০ যানবাহন আটক করেন।
অভিযানের পর বেলা তিনটায় জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চালানো এই অভিযানে ২০০ গাড়ি আটক করা হলেও 'মানবিক' কারণে সিংহভাগ ছেড়ে দিতে হয়েছে। শুধু বৈধ কাগজপত্র না থাকাসহ নানা কারণে মোটরযান আইনে ৪২টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করে ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। লকডাউনের সাত দিনে অবৈধ ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা আটক করা হয়েছে ৪৫৫টি। আর চলতি মাসের ২৬ দিনে ৬৭৩টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ৩৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ রোধে আট দিন ধরে বগুড়া শহর ও সদর উপজেলায় লকডাউন জারি রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, রোববার সকাল থেকেই শহরে মানুষের ঢল নামে। রাস্তায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। দরকারি কেনাকাটা কিংবা কাজ সারতে শহরে বের হওয়া মানুষ আর যানবাহনের ঢলে যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে শহর। বেলা যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজট। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যানজটের নাকাল চিত্র ছিল শহরের মফিজপাগলার মোড় থেকে সাতমাথা হয়ে দত্তবাড়ি পর্যন্ত প্রধান সড়কে। দীর্ঘ যানজট আর ভোগান্তি ছিল শহরের থানা মোড় থেকে কাঁঠালতলা হয়ে ফতেহ আলী বাজার গেট, সাতমাথা-স্টেশন সড়ক, সাতমাথা-খান্দার সড়কে, ইয়াকুবিয়া মোড় থেকে শহীদ আবদুল জোব্বার সড়ক-কালীবাড়ি মোড় হয়ে রোমানা আফাজ সড়কেও। শহরজুড়ে যানজটে নাভিশ্বাস ওঠে মানুষের। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকেও।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টায় পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা নিজেই রাস্তায় নামেন। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় গাড়ি থেকে নেমে বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে রাস্তায় বের হওয়া যানবাহন আটক শুরু করেন। অভিযানে যোগ দেয় ট্রাফিক পুলিশ, সদর থানা-পুলিশ এবং সদর ফাঁড়ি পুলিশও। ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে আটক করা হয় প্রায় ২০০ যানবাহন। লকডাউন লঙ্ঘন করে চালকদের কাছে মোটরসাইকেল নিয়ে এভাবে রাস্তায় বের হওয়ার কারণ জানতে চান পুলিশ সুপার। এ সময় অনেকেই পকেট থেকে চিকিৎসকের পরামর্শপত্র বের করে দেখান। বলেন, ওষুধ কিনতে শহরে বের হয়েছেন। অনেকেই নানা অজুহাত দেখান। তবে এসপি অজুহাত শোনেননি। গাড়ি আটক করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন ট্রাফিক পুলিশকে। বেলা একটার দিকে সাতমাথা ত্যাগ করার পর ট্রাফিক পুলিশ শুধু বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই রাস্তায় বের হওয়া ৪২টি যানবাহন বাদে অন্যদের ছেড়ে দেয়।
পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, নানা অজুহাত দেখিয়েছেন চালকেরা। নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রাস্তায় কেন জিজ্ঞাসা করতেই অনেকেই পকেট থেকে চিকিৎসকের 'ভুয়া ব্যবস্থাপত্র' বের করে দেখিয়েছেন। কেউ কেউ এক–দেড় বছরের পুরোনো ব্যবস্থাপত্রও দেখিয়েছেন। তবে কারও কোনো অজুহাত শোনা হয়নি। সব গাড়ি আটক করে 'যৌক্তিক' কারণ ব্যতীত বের হওয়া যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
বগুড়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্যাডেলচালিত ৬ হাজার ২০০ রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অথচ চলাচল করছে ৩০ হাজারের ওপরে। এর বাইরে আরও প্রায় ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক রয়েছে। বৈধ ও অবৈধ মিলে ১৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলাচল করছে।