রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যায় ২৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল

নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ
ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় ২৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজী সালাহ উদ্দিন।

অভিযোগপত্রে ২৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন। অপর ১৪ জন ঘটনার পর থেকে পলাতক। আসামিরা সবাই রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত।

আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের খবরের সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ২৯ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। গ্রেপ্তার ১৫ জন আসামির মধ্যে বিভিন্ন সময় কক্সবাজার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সাতজন রোহিঙ্গা। এই মামলায় মোট সাক্ষী ৩৮ জন।

পুলিশ জানায়, ২০২১ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ডি ব্লকের ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গাদের নেতা মুহিবুল্লাহ (৪৮)। তিনি ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। হামলার জন্য মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মি’ বা আরসার (আল-ইয়াকিন নামেও পরিচিত) কয়েকজন অস্ত্রধারীর নাম প্রচার করা হয়।

পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত করেন উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দিন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আজ সোমবার তিনি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন)। এই ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মুহিবুল্লাহ কিলিং স্কোয়াডের তিনজন সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে কিলিং স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য আজিজুল হকসহ তিনজন হত্যার দায় স্বীকার করে কক্সবাজার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মুহিবুল্লাহ হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ঘটনার পরপর মিয়ানমারে আত্মগোপন করায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না।

এপিবিএনের কর্মকর্তারা বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা মুহিবুল্লাহর পরিবারের ৯ সদস্যসহ ছয়টি রোহিঙ্গা পরিবারের ৩১ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। মাস খানেক আগে মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা ইউএনএইচসিআর-এর সহেযোগিতায় আশ্রয়শিবির থেকে কানাডায় চলে যান। তখন মামলার বাদী হাবিবুল্লাহও কানাডায় চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার তদন্তকাজ ব্যাহত হতে পারে ভেবে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে আশ্রয়শিবিরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হাবিবুল্লাহ আশ্রয়শিবিরে এপিবিএনের হেফাজতে আছেন।