রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে (৪৮) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে গতকাল বুধবার রাতে অস্ত্রধারীদের গুলিতে তিনি নিহত হন। আর সেখানকার সাধারণ রোহিঙ্গাদের দাবি, মুহিবুল্লাহ প্রত্যাবাসনবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের রোষানলে পড়েন। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে গেলে যাদের বেশি ক্ষতি হবে, তাদের ইন্ধনে এই হত্যাকাণ্ড।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে মুহিবুল্লাহর ঘরে গিয়ে দেখা যায়, শত শত রোহিঙ্গা তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় করেছেন। ঘরের ভেতরে কান্নাকাটি করছেন মুহিবুল্লাহর স্ত্রী নসিমা খাতুন (৪০)। পাশে বসে আছে তাঁর আট ছেলে–মেয়ে। রোহিঙ্গা নারীরা তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।
নসিমা প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকতে স্বামী মুহিবুল্লাহ স্কুলে রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েদের পড়াতেন। এ জন্য সবার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন তিনি। ভালো ইংরেজি বলতে পারতেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে তিনি চেষ্টা চালিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আলোচনায় আসেন মুহিবুল্লাহ। এ কারণে প্রত্যাবাসনবিরোধী রোহিঙ্গাদের রোষানলে পড়েন তিনি। তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হতো। কিন্তু তিনি ভয় পেতেন না। গতকাল বুধবার রাতে পাঁচটি গুলি করে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি তাঁর। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দাবি করে পরিবারের নিরাপত্তা চান।
স্থানীয় কয়েকজন রোহিঙ্গা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হামলাকারীরা আল-ইয়াকিন নামের একটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দলের বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই বাহিনীর প্রধান আবদুল হাকিম ওরফে ডাকাত হাকিম বেশ কয়েকবার মুহিবুল্লাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় রোহিঙ্গারা জানায়, ২০১৯ সালে ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। লম্বাশিয়া শিবিরের রোহিঙ্গা আবদুল জব্বার (৭০) বলেন, ওই মহাসমাবেশের পর থেকে মুহিবুল্লাহ প্রত্যাবাসনবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের রোষানলে পড়েন। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে গেলে যাদের বেশি ক্ষতি হতে পারে, তাদের ইন্ধনে এই হত্যাকাণ্ড।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখ রোহিঙ্গা। এই দলের সঙ্গে পরিবার নিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নেন মুহিবুল্লাহও।
মুহিবুল্লাহর পরিবারের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাইমুল হক বলেন, মুহিবুল্লাহর বাড়িতে পুলিশের পাহারা আছে। আগেও ছিল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার নইমুল হক বলেন, রাতে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে মুহিবুল্লাহ হেঁটে অফিসে ঢোকেন। সম্ভবত এই দলের সঙ্গে ছিলেন অস্ত্রধারীরা। বাইরে থেকে এসে হামলা করার প্রমাণ মিলছে না। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।