রোজিনা ইসলামকে আগামীকাল রোববারের মধ্যে জামিন দেওয়া না হলে সাংবাদিকেরা আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার না পেলে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। দুর্নীতিবাজেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। দেশে দুর্নীতির এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, সাংবাদিকেরা তা চান না।
আজ শনিবার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী মানববন্ধনে এসব কথা বলেন সাংবাদিকনেতারা। এই কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।
বক্তারা বলেন, দুর্নীতি-অপকর্ম ঢাকতেই সাংবাদিকদের নির্যাতন, মামলা ও জেল দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের লেখনী বন্ধ করতে কথিত আইন করা হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেছেন, রোজিনা ইসলাম দায়িত্বশীল সাংবাদিক। তিনি এই মহামারির সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নানা দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন। সরকারের উচিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। যিনি দুর্নীতি ধরিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে হয়রানি না করা।
রাজশাহী
রাজশাহীতে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে বাঘা উপজেলায়। বাঘা প্রেসক্লাবের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বাঘা রিপোর্টার্স ক্লাব, চারঘাট প্রেসক্লাব ও বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাব।
মানববন্ধনে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাঘা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল লতিফ মিঞা। বক্তব্য দেন সহসভাপতি গোলাম তোফাজ্জল কবীর, দৈনিক বার্তার মফস্বল সম্পাদক গোলম মোস্তফা, বাঘা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান, কলেজশিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফরজ আলী।
আরও বক্তব্য দেন কমিউনিস্ট পার্টির জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রশান্ত কুমার পাণ্ডে, বাঘা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমানুল হক আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম আলী, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতার রহমান, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি মহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক এসএম নাজিম উদ্দিন, চারঘাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক লালন উদ্দিন, বাঘা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম ইসলাম দিলদার, চারঘাট প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম, ঢাকা নিউজের সংবাদকর্মী মিজানুর রহমান প্রমুখ।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় রোজিনার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করে সাদুল্যাপুর প্রেসক্লাব। বেলা একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত উপজেলার ধাপেরহাট বন্দরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের এই কর্মসূচি পালিত হয়। অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করে ধাপেরহাট প্রেসক্লাব, পলাশবাড়ী ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা।
বক্তব্য দেন সাদুল্যাপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহজাহান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, সহসাধারণ সম্পাদক তোফায়েল হোসেন, সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান, সাংবাদিক এস এম আসাদুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, লাভলু প্রামাণিক, জালাল উদ্দিন, আবদুল করিম, রফিকুল ইসলাম ও প্রথম আলোর প্রতিনিধি শাহাবুল শাহিন।
বক্তারা বলেন, রোজিনা ইসলাম একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক, যিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করে দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছেন। এ সময় আগামীকাল রোববারের মধ্যে রোজিনা ইসলামের মুক্তি না দিলে দেশের অন্যান্য স্থানে কর্মরত সাংবাদিকের মতো গাইবান্ধাতেও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
পাবনা
জেলার চাটমোহর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সকাল ১০টার দিকে থানা মোড়ের আমতলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। চাটমোহর প্রেসক্লাবের সভাপতি রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সাবেক সভাপতি হেলালুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ মাহমুদ, উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অশোক চক্রবর্তী, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি জয়দেব কুণ্ডু, উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাপস রঞ্জন।
আরও বক্তব্য দেন চাটমোহর ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ জিয়ারুল হক, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোত্তালিব, সাংবাদিক ইকবাল কবীর, শাহীন রহমান, মাসুদ রানা, বিপ্লব আচার্য, বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব মিজানুর রহমান, চিকিৎসক অঞ্জন ভট্টাচার্য, বাম রাজনীতিবিদ জাকির হোসেন, চিত্রগৃহ চাটমোহরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমান আসাদ, তারুণ্যের আলোর সভাপতি মেহেদী হাসান, চাটমোহর যুব সোসাইটির দপ্তর সম্পাদক হুমায়ুন আহমেদ প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য দেন চাটমোহর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত সাহা কিংশুক। বক্তারা বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার করা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ। অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে, সেই সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা। তা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তাঁরা।
কর্মসূচি পালন করা হয়েছে জেলার বেড়া উপজেলাতেও। সেখানে বেড়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। বেলা ১১টার দিকে বেড়া প্রেসক্লাবের সদস্যরা পৌর শহরে এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে অংশ নেন বেড়ায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও বেড়া বন্ধুসভার সদস্যরা।
মৌন মিছিল বেড়া পৌর শহরের প্রধান রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে বেড়া বাজারে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। একপর্যায়ে এতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিউল আযমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সাংবাদিক বসন্ত দাস, সরকার আরিফুর রহমান, আবদুল হান্নান, হাফিজুর রহমান, ওমর সরকার, ওয়াহিদুজ্জামান, রতন আচার্য, সুজন দত্ত, নূর আমিন, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা খানম, আরিফুর রহমান, হারুন-অর রশীদ, রফিকুল ইসলাম, বরুন রায় প্রমুখ। এ ছাড়া, বেড়া বন্ধুসভার সভাপতি আবদুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামও বক্তব্য দেন।
নওগাঁ
দুপুরে শহরের মুক্তির মোড়ে নওগাঁ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি এ বি এম রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাংবাদিক রিফাত হোসেন, নওগাঁ একুশে উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি হবিবুর রহমান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নওগাঁ জেলা শাখার সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সহসভাপতি সূচনা সাথী প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রোজিনা ইসলামকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ঘটনায় দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিচার করতে হবে। সেই সঙ্গে সাংবাদিক রোজিনাকেও মুক্তি দিতে হবে।
সাংবাদিক নেতা এস এম আজাদ হোসেন বলেন, একজন সাংবাদিককে হয়রানিমূলক মামলায় কারাগারে পাঠানোর ঘটনা গণমাধ্যমকেই কারাগারে পাঠানোর শামিল।
এদিকে আজ দুপুরে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনেও মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন মান্দা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম, নিয়ামতপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রেজাউল ইসলাম, শাহজাহান সাজু, তাইয়েবুর রহমান, পলাশ বর্মণ, জিল্লুর রহমান প্রমুখ।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী এবং প্রতিনিধি, গাইবান্ধা, পাবনা, বেড়া ও নওগাঁ]