নাম ‘রূপভান’। তবে এটি রূপকথার সেই অপরূপা নয়, এটি একটি আগাম জাতের শিম।
‘শিম সাগর’খ্যাত পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে চাষ হয়েছে দুটি আগাম জাতের শিমের। তার একটি ‘রূপভান’, আরেকটি হলো ‘অটো’।
মাঠজুড়ে শিমের সবুজ লতা ভরে আছে বেগুনি ফুলে ফুলে। এর মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে হালকা লালচে শিম। চোখজুড়ানো দৃশ্য। লতা, ফুল ও শিমের এই মনোহর সৌন্দর্যের জন্যই এর রূপভান নামকরণ। আর অটো হচ্ছে দ্রুত বর্ধন ও উচ্চফলনশীল জাত।
বাজারে ইতিমধ্যেই আগাম জাতের রূপভান ও অটো শিম উঠতে শুরু করেছে। ভালো দামও মিলছে। পুষ্ট গাছ ও প্রচুর ফুল ফোটায় চলতি মৌসুমে শিমের ভালো ফলন হবে বলে মনে করছেন চাষিরা। ফলে করোনার দুঃসময়েও তাঁদের মুখে এখন চওড়া হাসি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার নাছিরামপুর, রামেশ্বর, কাঁকমাড়ি, কচুয়ারামপুর, দুর্গাপুর, রোকনপুর, খিদিরপুর, পারখিদিরপুর, চাঁদভা, নাদুরিয়া, সড়াবাড়িয়া, কালমনগর, সোনাকান্দর, সঞ্জয়পুর, বাচামারা, হাপানিয়া, বেরুয়ান, কুমারেশ্বর ও লক্ষ্মণপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শিমের আবাদ হচ্ছে। দিগন্তবিস্তৃত এই শিমখেতের জন্য এলাকার পরিচিতিই বদলে গেছে। লোকমুখে এই এলাকার নাম এখন ‘শিম সাগর’। চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৫০০ চাষি শিমের আবাদ করছেন। শিম আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৯৩০ হেক্টর অটো, ৪৫০ হেক্টরে রূপভান ও ১৭০ হেক্টর জমিতে ‘চকলেট’ জাতের শিমের আবাদ হচ্ছে।
জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে অটো শিম ও আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে রূপভান শিম বাজারে আসতে শুরু করেছে। চকলেট একটু পরের জাত। এটি বাজারে আসবে অক্টোবরের শেষ দিকে।
গত সোমবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শিম তুলতে ব্যতিব্যস্ত দেখা গেছে চাষিদের। পাবনা-চাটমোহর সড়কের আটঘরিয়া অংশের দেবোত্তর বাজার থেকে বাঁ দিকে মাঝপাড়া, খিদিরপুর, পারখিদিরপুর গ্রাম। সড়কে দাঁড়িয়ে যত দূর চোখ যায়—শিমের সবুজ খেত। সবুজ পাতা আর বেগুনি ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে আদিগন্ত মাঠ। খেতের পরিচর্যা ও নতুন শিম তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। শিম বিকিকিনির জন্য গ্রামে গ্রামে বসেছে অস্থায়ী বাজার। এসব বাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত নছিমন-করিমন ও ট্রাকবোঝাই শিম যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটবাজারে। এখানে পাইকারিতে প্রতি কেজি শিম ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খিদিরপুর গ্রামের পাইকারি শিম বাজার থেকে ব্যবসায়ী শুকুর আলী জানান, এই এলাকার শিম ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যেই নতুন শিম পাঠানো শুরু হয়েছে। খুচরা বাজারেও শিমের চাহিদা ও দাম ভালো আছে।
গ্রামের শিমচাষি আলহাজ উদ্দিন জানান, এবার শিমের গাছ পুষ্ট হয়েছে। প্রচুর ফুল আসছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত জমি থেকে শিম পাওয়া যাবে।
দেবোত্তর গ্রামের শিমচাষি মাসুদ রানা বলেন, ‘ইবার শিমির ফুল-ফল ভালো হইছে। পুকামাকড় ক্ষতি না করলি ফলন ভালো হবি। দামডা ভালো থাকলি লাভও ভালোই হবিনি।’
এ প্রসঙ্গে আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুখসানা কামরুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত শিমের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। পোকা ও রোগবালাই আক্রমণ না করলে ফলন ভালো হবে বলে আমরাও আশাবাদী। পোকার আক্রমণ থেকে শিমের জমি রক্ষা করতে আমরা কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। সব মিলিয়েই এখন ভালো লাভের আশায় দিন গুনছেন শিম সাগরের চাষিরা।’