পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত এক রুশ নাগরিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে প্রকল্পের আবাসিক এলাকা গ্রিন সিটি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে আট দিনে রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত পাঁচ রুশ নাগরিকের মৃত্যু হলো।
বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান। অধিকাংশই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে দাবি করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
ঈশ্বরদী থানা সূত্রে জানা গেছে, রোববার যাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁর নাম ভেরোটনিকভ আলেকজান্দ্রা (৪৫)। তিনি এই প্রকল্পে ‘নিকিম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। প্রকল্পের আবাসিক এলাকা গ্রিন সিটির একটি কক্ষে থাকতেন তিনি। দুপুরে সহকর্মীরা নিজ কক্ষে তাঁকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে প্রকল্প কর্মকর্তাদের জানান। এরপর থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। ভেরোটনিকভের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার রাত ২টার দিকে তলমাসেফ ভাইয়াসেলভের (৫৯) নামের এক রুশ নাগরিক ১৪ তলা আবাসিক ভবনের সিঁড়িতে পা পিছলে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে প্রকল্পের চিকিৎসকেরা গিয়ে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি প্রকল্পের এসএমইউ-১ নামের একটি সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
একই দিন রাত ৩টার দিকে প্রকল্পের ট্রেস্ট রোসেম নামের আরেক রুশ সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার চুকিন পাভেল (৪৮) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।
এর আগে ২৮ জানুয়ারি বারচেনকো আলেক্সেইর (৩৪) ও ২ ফেব্রুয়ারি শাকিরভ আলেক্সেইর (৩৯) নামের প্রকল্পের দুই রুশ কর্মী অসুস্থ হন। তাঁদের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এ আছমা খান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন। হৃদ্রোগে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুসের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
ঈশ্বরদী থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিহতদের দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। অন্যরা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তিনি জানান, রুশ নাগরিকদের অধিকাংশই অনেক মদ্য পান করেন। মদের কোনো ক্রিয়ায় তাঁদের মৃত্যু হলো কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য তাঁদের কিছু নমুনা সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল পেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।