রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আজ রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির ১৫তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কমিটির সভাপতি সাংসদ আফছারুল আমীন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, আবদুল কুদ্দুস ও এম এ মতিনসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিতি ছিলেন।
বৈঠকে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া রুয়েটের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কমিটির সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য রাজশাহী–২ (সদর) আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা সাংবাদিকদের বলেন, রুয়েটের বিভিন্ন পদে নিয়োগে উপাচার্যের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্ত হওয়ার পর সংসদীয় কমিটি এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে রুয়েটের বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রথম আলোসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজের শ্যালক, দুই ভাই, স্ত্রীর ফুফাতো ভাই, চাচাতো বোন, গৃহকর্মী ও তাঁর স্বামীকে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখ।
এ ছাড়া নিয়োগের নীতিমালার লঙ্ঘন করে পদের চেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ দিয়েছেন বলেও সংবাদে উল্লেখ করা হয়। রুয়েটের রেজিস্ট্রার দপ্তর জানায়, ২০১৯ সালে তিনটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রুয়েটে বিভিন্ন পদে ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছরের ৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় ওই নিয়োগ সিন্ডিকেট সভায় পাস হয়। কিন্তু এখনো নিয়োগের রেজল্যুশন করা হয়নি। এদিকে চলতি বছরের জুলাইয়ে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
আজ রোববার প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘রুয়েটে চাকরি পেলেন উপাচার্যের ভাই-বোন, শ্যালক ও গৃহকর্মী’ শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার সন্ধ্যায় রুয়েটের জনসংযোগ দপ্তরের সেকশন অফিসার আ ফ ম মাহমুদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে প্রকাশিত সংবাদকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মানহানিকর এবং একটি স্বার্থন্বেষী মহলের দ্বারা প্ররোচিত’ বলে দাবি করা হয়েছে।
রুয়েট কর্তৃপক্ষ বলছে, উপাচার্যের ভাই মো. লেবরুল ইসলাম অনেক আগে থেকেই রুয়েটে কর্মরত ছিলেন। তাঁর ছোট ভাই মো. মুকুল হোসেন ও শ্যালক সোহেল আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় চাকরি পেয়েছেন। এই তিনজনের নিয়োগ বোর্ডে উপাচার্য উপস্থিত ছিলেন না। নিয়োগ বোর্ডের সর্বসম্মতিতে অনুমোদনের পর সিন্ডিকেট তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে। অন্যরাও একইভাবে চাকরি পেয়েছেন। গৃহকর্মী লাভলী এবং তাঁর স্বামী এনামুল হক উপাচার্যের আত্মীয় নন এবং মাছুমা খাতুন উপাচার্যের চাচাতো বোন নন বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে রুয়েটের উপাচার্যের দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে প্রতিবাদলিপির বক্তব্যের পার্থক্য নেই। শুধু মাছুমা খাতুনকে প্রতিবাদলিপিতে উপাচার্যের চাচাতো বোন বলে অস্বীকার করা হয়েছে। আর গৃহকর্মী ও তাঁর স্বামীকে আত্মীয় বলে মানা হয়নি। তবে প্রথম আলোকে সরাসরি বক্তব্য দেওয়ার সময় উপাচার্য মাছুমা খাতুনের সম্পর্কটি স্বীকার করেছিলেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনে গৃহকর্মী ও তাঁর স্বামীকে আত্মীয় বলা হয়নি।