রুপা হত্যা মামলার রায় কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন

জাকিয়া সুলতানা রুপা হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে পরিবারের সদস্যদের মানববন্ধন। আজ বুধবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শহীদ মিনার চত্বরে
ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বাসিন্দা জাকিয়া সুলতানা রুপা হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদসংলগ্ন শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন হয়।

মানববন্ধনে রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, রুপা হত্যাকাণ্ডের রায় যথার্থ হয়েছে। কিন্তু ঘটনার প্রায় চার বছরেও রায় কার্যকর না হওয়ায় তাঁদের মনে সংশয় আর হতাশা বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত একবারও আপিল শুনানির তারিখ পড়েনি। আইনি জটিলতায় ছোঁয়া পরিবহনের বাসটিও মধুপুর থানা চত্বরেই পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

রুপার মা হাসনাহেনা বেগম বলেন, তাঁর মেয়ে স্বপ্ন দেখত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একদিন বড় কর্মকর্তা হবে। কিন্তু কিছু মানুষ নামের অমানুষদের কারণে তাঁর মেয়ের সেই স্বপ্ন চিরতরে হারিয়ে গেছে। তিনি এখন একটাই দাবি জানাচ্ছেন। দাবিটি হচ্ছে, দ্রুত তাঁর মেয়ের হত্যাকারীদের রায় কার্যকর করা হোক। তিনি বেঁচে থাকতে আসামিদের রায় কার্যকর দেখে যেতে চান।

তাড়াশ উপজেলা পরিষদসংলগ্ন শহীদ মিনারের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন রুপার ছোট ভাই উজ্জল হোসেন, তাঁর স্ত্রী টুম্পা খাতুন প্রমুখ।

পুলিশ ও রুপার পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন জাকিয়া সুলতানা রুপা। রাতে চলন্ত বাসে বাসটির চালক, চালকের তিন সহকারীসহ পাঁচজন তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পঁচিশমাইল এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যান।

খবর পেয়ে সেখান থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে মধুপুর থানা–পুলিশ। পরিচয় না পাওয়ায় ২৬ আগস্ট ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এরপর ২৭ আগস্ট তাঁর বড় ভাই হাফিজুর রহমান পত্রিকায় খবর পড়ে মধুপুর থানায় গিয়ে রক্তাক্ত লাশের ছবি দেখে তাঁর বোনকে শনাক্ত করেন। ৩১ আগস্ট রুপার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন রাতেই তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামে জানাজা শেষে রুপার লাশ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই সময় ছোঁয়া পরিবহনের চালকের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯), চালক হাবিবুর রহমান (৪৫) এবং সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলার চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে বিচারক আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন। এ ছাড়া ছোঁয়া পরিবহনের ওই বাস রুপার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার আদেশ দেন আদালত। পরে আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।