সাত খুনের আট বছর

রায় কার্যকর করা হলে অন্তরে শান্তি পেতাম

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের স্মৃতিচারণ করেন মা মেহেরুন নেছা ও মেয়ে রওজা। বুধবার সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সন্তান হত্যার আট বছর চলে গেলেও এখনো বিচারের অপেক্ষায় আছেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মেহেরুন নেছা। ছেলে জাহাঙ্গীর আলম আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় নিহতদের একজন। আজ বুধবার এ ঘটনার আট বছর পূর্তিতে মেহেরুন নেছা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রায় কার্যকর করা হলে অন্তরে শান্তি পেতাম।’

মেহেরুন নেছার বয়স ৬৫। সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায় থাকেন। দুপুরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে কথা হয়। ছেলের হত্যার প্রসঙ্গ উঠতেই মেহেরুন বলেন, ‘ছেলের জন্য বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। আট বছরেও বিচার পেলাম না। সন্তান হত্যার এই বিচার দেখে যেতে পারমু কি না, জানি না।’

জাহাঙ্গীর আলম সাত খুনের ঘটনায় নিহত মনিরুজ্জামান স্বপন নামে একজনের গাড়িচালক ছিলেন। মেহেরুন নেছা বলেন, ‘আমার পোলায় তো কারও ক্ষতি করেনি। ও তো গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাত। আমার ছেলেকে কেন মারল ওরা?’

মেহেরুন নেছা কদমতলীর বাড়িতে ছেলের বউ আর নাতনির সঙ্গে থাকেন। নাতনি রওজা নিহত জাহাঙ্গীরের একমাত্র মেয়ে। খুনের ঘটনার ২ মাস ১০ দিন পর রওজার জন্ম হয়। এখন তার বয়স ৭ বছর ১০ মাস। কদমতলী কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই জাহাঙ্গীর আলমের একটি বাঁধাই করা ছবি দেখিয়ে রওজা বলে, ‘এইটা আমার বাবা।’

জাহাঙ্গীরের স্ত্রী শামসুন্নাহার। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে কষ্টে দিনযাপনের কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘ঈদের আনন্দ কী, তা জানি না। রওজার বাবা বেঁচে থাকলে ওর নতুন পোশাকসহ কত কিছু কিনে দিত। এখন রওজাকে ওর বড় চাচা ও তিনি যতটুকু পারেন দেন।’ শামসুন্নাহার বলেন, ‘আমার সন্তানকে যারা বাবাহারা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি চাই।’

শামসুন্নাহার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে মাস্টাররোলে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রতি মাসে বেতন ৬ হাজার টাকা। শামসুন্নাহার বলেন, এই টাকায় সংসার চলে না। চাকরিটা স্থায়ী করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাহাঙ্গীরের বড় ভাই শাহজাহান সাজু। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ড তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা সাত খুনে মারা গেছেন, সেই পরিবারগুলো কোনো সরকারি সহযোগিতা পায়নি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।’

নিহত সাতজনের মধ্যে আছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম। তাঁর স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই দ্রুত খুনিদের রায় কার্যকর করা হোক। অসহায় পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হোক।’

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সদর উপজেলার লামাপাড়া এলাকা থেকে অপহৃত হন সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে সেই সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আলোচিত এ হত্যা মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১–এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ, অন্য দুই সাবেক কর্মকর্তা মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। উচ্চ আদালত ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা বহাল রাখেন।